কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নোয়াখালী জেলার চরাঞ্চলের কৃষকদের অনাবাদি জমিতে সূর্যমুখী আবাদে আগ্রহ বৃষকদের। রবি মৌসুমে জেলার সুবর্ণচর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২১০ একর জমিতে এ তেলবীজের আবাদ হয়েছে। বারির নোয়াখালী সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, লবণাক্ত ও খরাপ্রবণ হওয়ায় রবি মৌসুমে এ অঞ্চলে প্রায় ৭৫ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি থাকে। ২০০৯-১০ মৌসুমে ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় খরাপ্রবণ ও উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকার জন্য টেকসই ফসল ব্যবস্থাপনার উদ্ভাবন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১৩টি ফসলের ওপর গবেষণা পরিচালনা করে সরেজমিন বিভাগ।
দেখা যায়, রবি মৌসুমে এ জেলা বারি উদ্ভাবিত তিসি, সয়াবিন ও সূর্যমুখী চাষের জন্য উত্তম। এগুলোর মধ্যে বারি সূর্যমুখী-২ অনেক বেশি লবণসহিষ্ণু, দামও তুলনামূলক কম। এখন হাইব্রিড সূর্যমুখী বীজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। কিন্তু প্রতি কেজি বারি সূর্যমুখী-২ বীজের দাম ১০০ টাকার মধ্যে। ফলে বারি সূর্যমুখী আবাদে প্রতি একরে খরচ পড়ে ৫-৭ হাজার টাকা। রয়েছে বীজ সংরক্ষণ ও সংগ্রহের সুবিধা। হাইব্রিড বীজ সংরক্ষণযোগ্য নয়। মানের দিক দিয়ে হাইব্রিড ও বারি সূর্যমুখী-২ একই।
জানা গেছে, গ্লোব গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের উদ্যোগে সুবর্ণচরের আমান উল্যাহ, মোহাম্মদপুর ও পশ্চিম চরবাটা এবং সদর উপজেলার আন্ডারচরে সব মিলিয়ে ১৫৫ একর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। সুবর্ণচরের ভূঞারহাট-সংলগ্ন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ডাল ও তেলবীজ বর্ধন খামারে ১৭ একর জমিতে এর আবাদ হয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি কৃষকদের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে নিয়েছে বীজ উত্পাদন ও সংগ্রহ কর্মসূচি। এর আওতায় প্রায় ৩০ এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) সরেজমিন গবেষণা বিভাগের ‘জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড’-এর আওতায় সুবর্ণচর ও সদরে আট একরে সূর্যমুখী আবাদ হয়েছে। সরেজমিন বিভাগ পরীক্ষামূলকভাবে বারি সূর্যমুখী-২, কিরণী, হাইসান-৩৩, আরমানি গোল্ড জাতের সূর্যমুখী চাষ করেছে। বিএডিসি নিজস্ব খামার এবং ২০ কৃষকের মাধ্যমে বারি সূর্যমুখী-২ এবং গ্লোব হাইসান-৩৩ ও ভারত থেকে আমদানি করা সূর্যমুখী আবাদ করেছে।
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আবাদ হয় সূর্যমুখীর। ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা হয় এপ্রিলের মাঝামাঝিতে। এবার নোয়াখালীর ২১০ একর জমি থেকে প্রায় ১১০ টন ফসল উত্পাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। সরেজমিন বিভাগের আওতায় সূর্যমুখী চাষ করেছেন পশ্চিম আল-আমিন বাজারের জাবের (৫৫)। তিনি জানান, প্রতি রবি মৌসুমে তরমুজ, সয়াবিন কিংবা চীনাবাদাম চাষ করেন। এতে বেশ কয়েকবার নানা কারণে লোকসান গুনতে হয়েছে তাকে। ফলে এবার আর রবিশস্য আবাদ করেননি। সরেজমিন বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের প্রণোদনায় তিনি আড়াই একর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে বারি সূর্যমুখী-২ ও হাইসান-৩৩ আবাদ করেছেন।
তবে বাজার ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কিত জাবের। তিনি বলেন, এ অঞ্চলে এখনো সূর্যমুখী বিকিকিনি চালু হয়নি। বাজার ব্যবস্থার উন্নতি হলে আগামীতে এর চাষে আরো আগ্রহী হবেন এখানকার কৃষক। গ্লোব গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের কৃষি শাখা তত্ত্বাবধানকারী পানাফের রসুল খাজা জানান, নিজেদের কারখানায় তেল উত্পাদনের লক্ষ্যে সূর্যমুখী আবাদ করেছেন তারা। সূর্যমুখী আমদানি করে দেশে তেল উত্পাদন অনেক ব্যয়বহুল। ফলে গ্রুপের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতনদের ইচ্ছায় এ অঞ্চলে সূর্যমুখী আবাদ শুরু করা হয়েছে।
তার মতে, নোয়াখালীর মাটি লবণাক্ত ও খরাপ্রবণ। তাই এখানে সূর্যমুখীর ফলন ভালো হচ্ছে। আগে পরীক্ষামূলকভাবে এর আবাদ করেছিলেন। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে আগামীতে সূর্যমুখীর আবাদ বাড়াতে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। পানাফের রসুল খাজা আরো বলেন, প্রতি একর জমি আবাদে বীজ প্রয়োজন হয় সর্বোচ্চ তিন কেজি। চাষ, বীজ ও সার— সব মিলিয়ে খরচ ১০-১২ হাজার টাকা। প্রতি একরে ফলন পাওয়া যায় প্রায় ৪০ মণ। এ হিসাবে একরপ্রতি জমি থেকে ৪০ হাজার টাকার সূর্যমুখী বিক্রি সম্ভব। তিনি জেলার কৃষকদের সূর্যমুখী আবাদে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তাদের উত্পাদিত ফসল গ্লোব কিনবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন।
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের নোয়াখালী সরেজমিন গবেষণা বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আমির ফয়সাল বলেন, সূর্যমুখী লবণসহিষ্ণু ফসল। কৃষক বা শিল্পোদ্যোক্তারা আমদানি করা বীজের পরিবর্তে দেশে উদ্ভাবিত বারি সূর্যমুখী-২ আবাদ করলে সব দিক দিয়েই লাভবান হবেন। কারণ নিজেরা বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন, খরচ কমবে। এতে তারা লাভবান হবেন। সরকারিভাবে পর্যাপ্ত প্রণোদনা দেয়া গেলে এবং শিল্প মালিকরা এগিয়ে এলে সূর্যমুখী কৃষি খাতে বিপ্লব সৃষ্টি করবে।
সুত্রঃ বনিক বার্তা/ কৃপ্র/এম ইসলাম