কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নওগাঁ জেলায় প্রতি বছর আম চাষ বাড়ছে। চলতি মৌসুমে জেলায় আমবাগানের পরিসর বেড়ে প্রায় ১৩ হাজার হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। তবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা ও পাইকারি বাজার গড়ে না ওঠায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষী। জেলায় আম উত্পাদন বাড়াতে গবেষণা কেন্দ্র, পাইকারি বাজার ও সংরক্ষণাগার গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁর পোরশা, পত্নীতলা, মান্দা, বদলগাছী, ধামইরহাট, সাপাহার ও নিয়ামতপুরসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পানির স্তর মাটির অনেক নিচে হওয়ায় বছরের বেশির ভাগ সময় জমি পতিত থাকে। শুধু বর্ষা মৌসুমে এসব জমিতে আমন ধান চাষ হয়ে থাকে। তবে ধানের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় এসব অঞ্চলের চাষীরা আম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ফলে প্রতি বছর জেলায় আমবাগানের পরিমাণ বাড়ছে। চলতি মৌসুমে তা এসে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার হেক্টরে। নওগাঁর আম সুস্বাদু হওয়ায় দুই বছর ধরে বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে।
পোরশা উপজেলার নীতপুর বাজার এলাকার কাশেম উদ্দিন জানান, আমের বাগানে ডাল, গম ও সরিষা চাষ করে এক বিঘা জমিতে বছরে ১ লাখ টাকা আয় করা যায়। এ কারণে অনেকে নতুন করে আম চাষ শুরু করেছেন। সফিকপুর গ্রামের রবীন্দ্রনাথ সরকার জানান, জেলায় আগে ল্যাংড়া, ফজলি, ক্ষীরসাজাতের আম চাষ হতো। বর্তমানে উন্নত জাতের আম্রপলি ও বারি-৪ আম চাষ হচ্ছে। সাধারণ জাতের চেয়ে আম্রপলি ও বারি-৪ জাত চাষ করে দ্বিগুণ আম উত্পাদন ও দাম পাওয়া যায়। ফলে উন্নত জাতের আম চাষ বাড়ছে।
জালুয়া গ্রামের আমচাষী রইচ উদ্দিন জানান, পোরশা অঞ্চলের আম সুস্বাদু হওয়ায় সারা দেশে এর চাহিদা রয়েছে। কোনো রাসায়নিক দ্রব্য ছাড়াই আম বাজারজাত করা হয়ে থাকে। তবে আম বিক্রির জন্য স্থানীয় কোনো বাজার নেই। বাজার সৃষ্টি করা হলে চাষীরা আম বিক্রি করে আরো লাভবান হতেন।
সাপাহার উপজেলার জলসা গ্রামের আমচাষী আব্দুস সোবহান জানান, বাজার না থাকায় চাষীরা আমের ন্যায্য দাম পান না। এ সুযোগে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা লাভবান হন।
পোরশার আমচাষী হাবিবুর রহমান জানান, এ অঞ্চলের আম চাঁপাইনবাবগঞ্জের চেয়েও সুস্বাদু। পোরশার আম বিদেশেও রফতানি হয়। কিন্তু জেলায় আমের বাজার না থাকায় কেউ এ আম চেনে না। আমের বাজার ও সংরক্ষণাগারের ব্যবস্থা করলে পরিচিতি বাড়বে ও চাষীরা লাভবান হবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সত্যব্রত সাহা জানান, পাইকারি বাজার না থাকায় জেলার চাষীরা কম মূল্যে আম বিক্রি করতে বাধ্য হন। পাঁচ-ছয় বছর আগে জেলায় মাত্র ছয় হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হতো। এবার ১৩ হাজার হেক্টরে চাষ হয়েছে। এ হিসেবে প্রতি বছর গড়ে এক হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে আম বাগান গড়ে উঠছে। নওগাঁর আম সুস্বাদু হওয়ায় দুই বছর ধরে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।
কৃপ্র/এম ইসলাম