কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে ঝিনাইগাতী বাজারসহ পাঁচ ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে ঝিনাইগাতী সদর, নলকুড়া, ধানশাইল, হাতিবান্ধা ও মালিঝিকান্দা। এসব এলাকার উঠতি পাকা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ঢলের পানিতে বিপুলসংখ্যক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দিবাগত গভীর রাত থেকে টানা ১০ ঘণ্টা ঝিনাইগাতীতে মুষলধারে বৃষ্টি হয়। সেই সঙ্গে ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবল বেগে মহারশি নদীর রামেরকুড়া এলাকার বেড়িবাঁধের পুরোনো ভাঙা অংশ দিয়ে ঝিনাইগাতী বাজারে প্রবেশ করে। এতে ঝিনাইগাতী বাজারে অবস্থিত ডাকঘর, সাবরেজিস্ট্রার, নলকুড়া ভূমি কার্যালয় ও মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের চারপাশের এলাকা প্লাবিত হয়। সেই সঙ্গে উপজেলার সুরিহারা, বনগাঁও, চতল, বাগেরভিটা, আয়নাপুর, ফাকরাবাদ, দড়িকালিনগর, সারিকালিনগর, পাগলারমুখ, বগাডুবি, বালিয়াচণ্ডি, বালিয়াগাঁওসহ ৩০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার উঠতি পাকা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেই সঙ্গে বিপুলসংখ্যক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
যে মহারশি নদীর বাঁধ ভেঙে এবারের এই ক্ষতি, তা দীর্ঘদিন ধরে ভাঙা অবস্থায় আছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা মনে করেন, এ বাঁধ সংস্কারে আগাম ব্যবস্থা নিলে এই ক্ষতি রোধ করা যেত। এ বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নিয়ন্ত্রণ করে। জামালপুরে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী নব কুমার চৌধুরী বলেন, বেড়িবাঁধ সংস্কারে ৩২ লাখ টাকার একটি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। তবে এর জন্য অর্থ পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, জরুরি পরিস্থিতিতে বাঁধ রক্ষায় লোকজন পাঠানো হয়েছে।
ঝিনাইগাতীর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কোরবান আলী আজ প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক হিসাবে উপজেলার এক হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল ঢলের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এর পরিমাণ আরও বাড়বে বলে তিনি জানান। ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের সুরিহারা গ্রামের কৃষক হাছান আলী বলেন, তাঁর দেড় একর জমির বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি সরে গেলে বোঝা যাবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে।
সুরিহারা গ্রামের আরেক কৃষক হাসেম আলী বলেন, তাঁর দুই একর জমির বোরো ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। উপজেলার বালিয়াগাঁও দাড়িয়ারপাড় গ্রামের একাধিক কৃষক তাঁদের ফসলহানির কথা জানান। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা বলেন, বোরো ধান তাঁদের প্রধান ফসল। এ ফসল দিয়েই তাঁদের সংসার চলে। ঢলের পানিতে ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন কীভাবে সংসার চলবে, এ নিয়ে তাঁরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আজ ছিল চলতি মৌসুমের প্রথম পাহাড়ি ঢল। আকস্মিক এ ঢলে ঝিনাইগাতী বাজারের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এলাকাবাসীর মধ্যে দুর্ভোগ ও ভোগান্তি নেমে আসে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ জেড এম শরীফ হোসেন বলেন, পরিস্থিতি বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। পানি নিম্নাঞ্চলে নামছে। প্রাথমিক হিসাবে ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমির বোরো ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এ ছাড়া ঢলের পানিতে বিভিন্ন এলাকার পুকুরের মাছও ভেসে গেছে বলে তিনি জানান।
সুত্রঃ প্রথম আলো / কৃপ্র/এম ইসলাম