‘ছাদবাগান তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত প্রশমন করা সম্ভব’
কৃষিবিদ বশিরুল ইসলাম: ঢাকা শহরের ৬০ শতাংশ জায়গাজুড়ে আছে ফাঁকা ছাদ। যা শহরে তাপমাত্র বৃদ্ধিতে অনেকাংশে দায়ী, কেননা দিনের বেলায় এসব ছাদ সূর্যের আলোতে তাপ শোষণ করে। ঢাকা শহরের সব ছাদে ছাদবাগান করা হলে এই তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত প্রশমন করা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেজ্ঞরা।অব্যবহৃত ছাদে খুব সহজেই পরিকল্পিতভাবে ফুল, ফল ও শাক-সবজির বাগান তৈরি করে পারিবারিক ফুল, ফল ও শাক-সবজির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিকালচারাল বোটানি বিভাগের ছাদে ছাদবাগানের একটি নতুন মডেল তৈরি করা হয়েছে যার নাম নিবিড় ছাদবাগান। যেখানে বাগানের মোট ক্ষেত্রফলের সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ রাস্তা, ১০ শতাংশ বসার জায়গা, ৪০ শতাংশ শাক-সবজি, ১০ শতাংশ ফুল ও শোভাবর্ধক গাছ, ২০ শতাংশ ফল, মসলা ও ঔষধি এবং ৫ শতাংশ অন্যান্য গাছের জন্য বিবেচনায় রেখে বাগানের মডেলটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এ মডেলটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-অধিক জীববৈচিত্র্য, দৃশ্যত খুবই আকর্ষণীয়, বিনোদন ও খাদ্য উৎপাদনের জায়গা হিসেবে ব্যবহার হয়।
বাগানে প্রবেশমুখেই চোখে পড়ল বড় টবে কাঁচা-পাকা অমৃত সাগর কলা। টবের গাছেই ঝুলছে লোভনীয় ডালিম আর পেঁপে। পাশেই রয়েছে করলার মাচা, লেবু, আমলকী, বেগুন, পালংশাক, লালশাক, ডাঁটাসহ বিভিন্ন সবজির বাগান। অন্য পাশে পেয়ারা, পেঁপে, স্ট্রবেরি, আম, পেয়ারা, লেবু, ডালিম, কামরাঙ্গা, ড্রাগন ফ্রুট, আঙ্গুর, কমলা, আনারস, জামরুল, লিচু, করমচা, বরই, জাম্বুরা, জলপাইসহ কয়েকটি দেশি-বিদেশি ফলের গাছ।
ছাদবাগান সম্পর্কে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এগ্রিকালচারাল বোটানি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহবুব ইসলাম জানান, বহির্বিশ্বের মানুষ অনেক আগে থেকেই ছাদবাগান করে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকা শহরে অপরিকল্পিতভাবে অল্পসংখ্যক ছাদবাগান করা হলেও তা ব্যাপকতা লাভ করেনি। ছাদবাগান করে শহরে গাছপালা প্রবর্ধনের মাধ্যম জীবের জন্য নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব।
গবেষণায় দেখা গেছে, ছাদের বাগান বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে ঘরের ভিতরের তাপমাত্রা প্রায় ১.৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস করতে পারে, যা শীতলীকরণ চাহিদার জন্য বিদ্যুৎ খরচ কমায় এবং ছাদবাগানে ছাদের তাপমাত্রা ও ছাদবাগান বিহীন ছাদের তাপমাত্রার পার্থক্য ৭.৮৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস প্রায়। ড. মাহবুব আরও জানান, ছাদবাগান বৃষ্টির পানি ধরে রাখা, শহুরে কৃষির সম্প্রসারণ তথা ফুল, ফল ও শাক-সবজির চাহিদা পূরণ, আয়ের উৎস ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এটি সামাজিক সম্পর্ক, শিক্ষা, গবেষণা এবং খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যম শহুরে কৃষির একটি মডেল হতে পারে।
শেকৃবি উপাচার্য প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, ঢাকা শহরে যদি ব্যাপকভাবে ছাদবাগানের প্রসার করা যায় তাহলে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও অন্যান্য দূষণকারী উপাদানের মাত্রা কমে আসবে। খরতাপের প্রভাব ও পরিবেশ দূষণ অনেকাংশে কমাবে। এ ছাড়া এর মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে।
লেখক : জনসংযোগ কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব), শেকৃবি, ঢাকা।
কৃপ্র/এম ইসলাম