কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দিন-রাত চেষ্টার পরও রক্ষা পেল না সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার বৃহত্ শস্যভান্ডার শনির হাওর। হাজার হাজার মানুষের পরিশ্রমকে ব্যর্থ করে দিয়ে হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে পাকা-আধাপাকা বোরো ধান তলিয়ে গেল শনিবার গভীর রাতে। শনির হাওরের লালুর গোয়ালা বাঁধের উত্তর পাশের প্রায় ৪০ ফুট জায়গা ভেঙে পানি প্রবেশ করে। এতে তলিয়ে যায় হাওরের প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল।
শনির হাওরের ধান তলিয়ে যাওয়ার খবরে শুধু তাহিরপুর নয় সমগ্র জেলাবাসীর মাথায় যেন আবার আকাশ ভেঙে পড়েছে। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শনির হাওরের বাঁধ শত চেষ্টা করেও রক্ষা করা গেল না।’ হাওর পাড়ের গ্রাম গবিন্দশ্রী’র কৃষক সেলিম আখঞ্জী বলেন, ‘শেষ সম্বল ছিল শনির হাওর, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটিও চলে গেল, সারা বছর চলব কিভাবে তাই ভাবছি!’ হাওর পাড়ের কৃষক নেতা তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সমপাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলার সবচেয়ে বড় হাওরটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য গত ২৬ দিন ধরে কৃষকদের নিয়ে বাঁধে কাজ করেছি । কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। হাওর পাড়ের মানুষগুলো কিভাবে জীবন বাঁচাবে সেটাই এখন ভাবার বিষয়।’ এদিকে জামালগঞ্জ উপজেলার বিশাল পাগনার হাওরটিও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জেলার এই দুটি বড় হাওর ছিল জেলাবাসীর শেষ ভরসা। এর মধ্যে শনির হাওর চলে গেল। রইল পাগনার হাওর। কিন্তু শেষতক এর ভাগ্যে কি আছে কে জানে!
এবার চৈত্রের শেষে প্রবল বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেট বিভাগের চার জেলায় ব্যাপক ফসলহানি ঘটে। এমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় সুনামগঞ্জ জেলার। সেখানে বিভিন্ন হাওরের কাঁঁচা বোরো ধানের মাঠ ডুবে গেলে কৃষকদের এক অবর্ণনীয় দুর্ভোগ শুরু হয়। শনির হাওর ডোবায় এই পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটল। একদিকে ফসলডুবি, অন্যদিকে হাওরে ধান গাছ পচে অ্যামানিয়া গ্যাসে সিলেটের অনেক নদী ও হাওরের মাছে মড়ক লেগেছে। সেই মাছ ও পচা পানি খেয়ে হাঁস ও পাখি মরছে। দুর্গন্ধে এলাকাবাসীর ত্রাহী অবস্থা। আর এর সব বিপর্যয়ের মূলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাওর রক্ষা বাঁঁধ নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতি-লুটপাট ও অনিয়মের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনসাধারণ ও কৃষক সমাজের জোরালো প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। জনদাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দেওয়া হয়েছে তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ঠিকাদার ও প্রজেক্ট বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের বিল পরিশোধ না করার জন্য। এদিকে দুদক এর একটি বিশেষ টিম হাওর রক্ষা প্রকল্প কাজের তদন্ত শুরু করেছে।
রবিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, শনি হাওরের বোরো ফসল হারিয়ে হাওর পাড়ের কৃষকরা কাঁদছেন বিলাপ করে। কৃষক সোনা মিয়া জানান, কিছু ধান-কাটার উপযুক্ত হলেও শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় অনেক কৃষক ধান কেটে নিতে পারেনি। যার ফলে কৃষকের চোখের সামনেই পানিতে ডুবছে তাদের সারা বছরের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন বোরো ধান। হাওর পাড়ের ভাটি তাহিরপুর গ্রামের কৃষক সামায়ুন কবির বলেন, বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার খবর পেয়ে ধান কাটতে হাওরে গিয়েছিলাম। কিন্তু দেখতে দেখতে জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেল। কেউ কেউ অবশ্য দ্রুত কিছু আধাপাকা ধান কেটে নৌকায় তুলতে পেরেছে। তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুছ ছালাম বলেন, শনি হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর বোরো জমির আধাপাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।
সুত্রঃ ইত্তেফাক/ কৃপ্র/এম ইসলাম