কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙনে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার প্রায় দুই হাজার পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদতীরবর্তী বাসিন্দারা। সরকারি-বেসরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্তরা। সরেজমিন ভাঙনকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাজীবপুরের মোহনগঞ্জ ইউনিয়নসহ আশপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই নদগর্ভে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘরসহ ফসলি জমি। হুমকির মুখে পড়েছে মোহনগঞ্জ বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ, শিক্ষপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও কমিউনিটি ক্লিনিকসহ নানা স্থাপনা। এ অবস্থায় ভাঙনরোধে সরকারের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী।
জানা যায়, মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের মোহনগঞ্জ বাজার, নয়ারচর, নেওয়াজি, শংকরপুর, হাজিপাড়া, ফকিরপাড়া ও ব্যাপারীপাড়াসহ প্রায় ২৫টি গ্রামে এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে ইউনিয়নবাসী মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করলেও কোনো ফল হয়নি। অন্যদিকে ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো আশ্রয়হীনভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের অভিযোগ, তাদের এ দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় মিলছে না কোনো সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা। এদিকে সব হারানোর আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটছে ভাঙনের হুমকিতে থাকা পরিবারগুলোর।
মোহনগঞ্জ গ্রামের জামাল উদ্দিন জানান, এ পর্যন্ত চারবার তার বাড়ি বিলীন হয়েছে। আবারো তার বাড়ি ভাঙনের মুখে পড়েছে। ভাঙনের শিকার এক বিধবা জোহরা বেগম বলেন, ‘১০ দিন হয় ভাঙনের মুখে ঘরবাড়ি সরিয়ে নদের নিকটবর্তী অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছি। এখনো ঘর তুলতে পারিনি। মেম্বার-চেয়ারম্যানরা কোনো সাহায্য দেয় না। এ অবস্থায় কোথাও যাওয়ারও উপায় নেই। দিনে একবেলা খাবার জোটে, দুই বেলা উপোস থাকতে হয়।’ একই এলাকার সোবহান মিয়া বলেন, ‘অন্যের জমিতে ঘর রেখেছি। ভিটেমাটি, আবাদি জমি সবই গেছে। ঘর তোলার আর জমি নেই। ছেলেমেয়ে নিয়ে কি করব, ভেবে পাচ্ছি না।’ মোহনগঞ্জ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সালমা খাতুন জানায়, তাদের বিদ্যালয়টি নদের কিনারে পড়েছে। যেকোনো সময় এটি ভাঙনের শিকার হতে পারে।
এ ব্যাপারে মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জানান, বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই তার ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র ভয়াল রূপ ধারণ করেছে। এরই মধ্যে ইউনিয়নের প্রায় দেড় হাজার পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে আমি উপজেলা চেয়ারম্যানসহ এলাকাবাসীকে নিয়ে অনেকবার সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করেছি। কোনো কাজ হচ্ছে না। তাদের একটাই কথা, বরাদ্দ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি সরকারের নিকট আকুল আবেদন জানাই, যেন দ্রুত বরাদ্দ দিয়ে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়।’ রাজীবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান শফিউল আলম বলেন, ‘ভাঙন ঠেকাতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করলেও টনক নড়ছে না সংশ্লিষ্ট বিভাগের। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কুড়িগ্রাম জেলার রাজীবপুর ও রৌমারী উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন চলছে। আমরা এ দুটি উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার স্থায়ী তীরসংরক্ষণ কাজ ও প্রায় ২০ কিলোমিটার ড্রেজিংসহ একটি প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছি, যেটা প্রক্রিয়াধীন। মোহনগঞ্জ বাজার এলাকায় ভাঙন রোধে গত বছর কিছু কাজ করেছি। এ বছরও ৩৩০ মিটার কাজের অনুমোদন পেয়েছি। শিগগিরই সেখানে কাজ শুরু হবে। এছাড়া প্রবল ভাঙনকবলিত এলাকাগুলোয় জরুরি কাজ করার জন্য বোর্ডে বরাদ্দ চেয়েছি। বরাদ্দ পেলে কাজ করা হবে।’
সুত্রঃ জনকণ্ঠ / কৃপ্র/এম ইসলাম