কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ গত সাত দিনের টানা বৃষ্টিতে সয়াবিনের রাজধানী হিসেবে খ্যাত লক্ষ্মীপুরে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানিতে ডুবে গেছে ২৯ হাজার ৪৯৫ হেক্টর সয়াবিনসহ প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমির রবি ফসল। এতে একশ’ কোটি টাকারও বেশি ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। তবে ক্ষতির পরিমাণ ২শ’কোটি টাকা হবে বলে ধারণা করছেন চাষীরা।সয়াবিন, তরমুজ, মরিচ ও বাদামসহ মাঠের বিভিন্ন রবি ফসল পানির নিচে ডুবে পচে এখন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। চোখের সামনেই কষ্টার্জিত ফসল হারিয়ে চরম দিশেহারা কৃষকরা। ঋণ পরিশোধ করতে সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন তারা।
কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ৭০ ভাগ সয়াবিন লক্ষ্মীপুরে উৎপাদন হয়। এজন্য লক্ষ্মীপুরকে ‘সয়াবিনের রাজধানী’ও বলা হয়ে থাকে। দেশের প্রতিষ্ঠিত নামকরা ফিড কোম্পানিরা এখান থেকে সয়াবিন সংগ্রহ করেন। এ সোনার ফসলকে ঘিরে উপকূলীয় চরাঞ্চলের মানুষের জীবন মান বদল ও গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছিল।
কৃষকরা জানায়, বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও এবং ধার-দেনা করে তারা ক্ষেতে সয়াবিন, মরিচ, বাদাম ও তরমুজের চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছিল বাম্পার।
গত ১৯ এপ্রিল থেকে সাতদিনের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে তাদের সর্বনাশ করে দিয়েছে। অথচ, আবহাওয়া ভালো থাকলে ১৫-২০ দিন পর তারা ফসল ঘরে তুলতে পারতেন। কিছু আধা পাকা ফসল তুলতে পারলেও ভাপিয়ে সেগুলো পছন ধরেছে। অনেক ক্ষেতে ফসল পচে এখন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে আশপাশ এলাকায়। তারা ঘুরে দাঁড়াতে সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন।
জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে লক্ষ্মীপুরে এ রবি মৌসুমে ৯২ হাজার ৩৩৬ হেক্টর জমিতে সয়াবিন, মরিচ, তরমুজ, ফেলন, মুগ, চিনা বাদাম ও মিষ্টি আলু ফসলের আবাদ হয়। এরমধ্যে শুধু ৫০ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতেই সয়াবিন চাষ করা হয়। ইতোমধ্যে প্রায় ৩০হাজার হেক্টর জমিনের সয়াবিন পচে গেছে। জেলায় সয়াবিনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ মেট্রিক টন। যার বাজার মুল্য ছিল সাড়ে তিনশ কোটি টাকার বেশী। বৃষ্টিতে রামগতি, কমলনগর ও রায়পুরে বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি সয়াবিন, মরিচ, বাদাম ও তরমুজ পচে ক্ষতি হয়। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সপ্তাহব্যাপী টানা বৃষ্টিতে একশ’ কোটিরও বেশি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে বেসরকারি এক হিসেবে দেখা গেছে, কৃষকের প্রায় দুইশ কোটি টাকার ফসলহানি হয়।
কমলনগরের চর কালকিনি এলাকার সয়াবিন চাষি বশির উল্লাহ জানান, তিনি কৃষি ঋণ নিয়ে প্রায় ৩ একর জমিতে সয়াবিন চাষ করেন। টানা বৃষ্টিতে তার সকল ফসল পচে নষ্ট হয়ে গেছে। সরকারের সহায়তা দাবি করেন তিনি। কমলনগরের কালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফ উল্লাহ জানান, তার ইউনিয়নে আবাদকৃত সয়াবিনসহ সকল রবি ফসল টানা বৃষ্টিতে পানিতে ঢুবে পচে গেছে। এতে চাষীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। সরকারি সহায়তা ও কৃষি ঋণ না পেলে কৃষকরা আর্থিক সংকটে ভবিষ্যতে চাষাবাদ করতে পারবে না।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ গোলাম মোস্তফা জানান, ৭ দিনের টানা বৃষ্টিতে সাড়ে ২৯হাজার হেক্টর সয়াবিনসহ প্রায় ৩৫হাজার রবি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকার বেশী। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আবারও চাষাবাদে ফেরাতে কৃষকদের সরকারি সহায়তা দেয়া প্রয়োজন।
সুত্রঃ বাসস / কৃপ্র/এম ইসলাম