কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ জোহানেসবার্গের ছাদে ছাদে বাগান তৈরির চল শুরু হয়েছে৷ হাইড্রোপনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও পানির অপচয় না করে সেখানে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে৷ ফলে স্থানীয় বাজারে সাশ্রয়ী মূল্যে সবজি পাওয়া যাচ্ছে, কর্মসংস্থানও হচ্ছে মানুষের৷দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম জনবহুল এলাকা হিলব্রোর ভবনগুলোর ছাদ ধীরে ধীরে কৃষিভূমিতে পরিণত হচ্ছে৷ ক্যাথেরিন খামবুলে আর থান্ডি এনগুবেনি ‘কোটজে রুফটপ ফুড গার্ডেন কোঅপারেটিভ’-এ কাজ করেন৷ ক্যাথেরিন আর থান্ডি শখের গার্ডেনার নন৷ এ বিষয়ে রীতিমত প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তাঁরা৷ এখন প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১৭০ কেজি শাক উৎপাদন করছেন৷ এছাড়া সালাদ, ঔষধি গাছ, বাঁধাকপি ইত্যাদির চাষও করেন৷ স্থানীয় বাজারে এগুলো বিক্রি করা হয়৷
হাইড্রোপনিক প্রযুক্তিতে ছাদে বাগান করা হচ্ছে৷ এভাবে ফসল ফলাতে মাটির প্রয়োজন হয় না৷ টিউবে করে চারা গাছগুলোতে পানি দেয়া হয়৷ এই উপায়ে চারা অনেক দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং এভাবে সারা বছরই চাষ করা যায়৷ ক্যাথেরিনকে শুধু প্রতিদিন দেখতে হয় পানিতে পিএইচ আর পুষ্টির মাত্রা ঠিক আছে কিনা৷ ক্যাথেরিন খামবুলে বলেন, ‘‘এই প্রযুক্তিতে পানির অপচয় হয় না৷ এই ব্যবস্থায় এক ফোঁটা পানিও নষ্ট হয় না৷ টিউবের মধ্য দিয়ে পানি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গিয়ে আবার ফিরে আসে৷ ফলে পানি একটুও নীচে পড়ে না, এক ফোঁটাও না৷”
দেশজুড়ে যখন খরা চলছে তখন পানির অপচয় না হওয়াটা দারুণ ব্যাপার৷ খরার কারণে অনেক কৃষক ঠিকমত ফসল ফলাতে পারছেন না৷ জোহানেসবার্গ সহ অন্যান্য শহরে পানি ব্যবহারের নির্দিষ্ট পরিমাণ ঠিক করে দেয়া হয়েছে৷ ফলে এখন শস্য, মাংস আর সবজি আমদানি করতে হচ্ছে৷ এ কারণে ২০১৬ সালে খাদ্যমূল্য ১০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল৷ আগামী বছরগুলোতেও খরার পরিমাণ বাড়ার আশঙ্কা থাকায় জোহানেসবার্গের শহর কর্তৃপক্ষ ‘ছাদ কৃষি’-তে বিনিয়োগ করছে৷
শহর কর্তৃপক্ষ চাষাবাদের জন্য জায়গা, হাইড্রোপনিক প্রযুক্তি আর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে৷ পানি অপচয় রোধ ও স্থানীয় বাজারে সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্য সরবরাহ করা ছাড়াও ‘রুফটপ গার্ডেন’ প্রকল্পের আওতায় নতুন নতুন চাকরি সৃষ্টি হচ্ছে৷
জোহানেসবার্গ শহর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা ডোনি ফাকগিয়ো বলেন, ‘‘দারিদ্র্যতা থেকে নাগরিকদের বের করে আনার মাধ্যমে তাঁদের ক্ষমতা বাড়ানো রুফটপ গার্ডেন প্রকল্পের একটি লক্ষ্য৷ শহর কর্তৃপক্ষের আওতায় যে ভবনগুলো আছে মূলত আমরা সেগুলোতেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চাই৷ তবে ব্যক্তিগত ভবনের ছাদেও যেন প্রকল্পের কাজ ছড়িয়ে দেয়া যায় সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি আমরা৷”
রুফটপ গার্ডেন প্রকল্পে যোগদানের আগে অনেক নারীর কোনো আয় ছিল না৷ আর এখন সবুজ জোহানেসবার্গ গড়ার পাশাপাশি নিজেদের ব্যবসা পরিচালনা করছেন তাঁরা৷ রিন খামবুলে বলেন, ‘‘নামের সঙ্গে উদ্যোক্তা শব্দটি আমাদের গর্বিত করে না৷ যা আমাদের গর্বিত করে তা হচ্ছে, আমরা এখন নিজেরাই নিজেদের দেখাশোনা করতে পারি, কারও উপর নির্ভর করতে হচ্ছে না৷”
এখন পর্যন্ত ছয়টি ছাদে বাগান তৈরিতে সহায়তা করেছে শহর কর্তৃপক্ষ৷ ক্যাথরিন আর তাঁর সঙ্গীরা প্রকল্প সম্প্রসারণ ও আরও কিছু নতুন লোক নিয়োগের পরিকল্পনা করছে৷ কারণ জোহানেসবার্গে বাগান করার জন্য উপযুক্ত ছাদের অভাব নেই৷
সুত্রঃ.dw.com/ কৃপ্র/এম ইসলাম