কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ সর্বস্ব হারানো মানুষ বসত গড়ে তুলেছেন খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের ঝুঁকিতে থাকা বেড়িবাঁধগুলোর উপর। এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বহুদিন সংস্কার না হওয়া এসব বাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানা গেছে, পাউবোর খুলনা-১-এর অধীনে ৩৬৫ দশমিক ২৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। সংস্কারের অভাবে অন্তত ১০৯ কিলোমিটার বাঁধের অবস্থা জীর্ণ। পাউবো খুলনা-২-এর অধীনে থাকা ৫১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৪৫ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ।
একই অবস্থা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায়। বাগেরহাটের ৩১৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় ৬০ কিলোমিটার বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া প্রায় ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নিচু হয়ে গেছে। ভরা জোয়ারের সময় বাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিল এলাকাবাসী। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৭৯৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ২১০ কিলোমিটারই ঝুঁকিপূর্ণ। দ্রুত সংস্কার করা না হলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে এসব বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হতে পারে বিশাল এলাকা।
কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের গোলখালী গ্রামের মো. তসলিম মোল্লা বলেন, খুলনা জেলায় বাস করলেও নিকটবর্তী বেড়িবাঁধটি সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায়। সঙ্গত কারণেই তারা বেড়িবাঁধ সংস্কারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয় না। দীর্ঘদিন জরাজীর্ণ পাঁচ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে একটু সংস্কার করেছে। তবে দুর্বল বাঁধ ভেঙে যেকোনো মুহূর্তে নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নটির। কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আ খ ম তমিজ উদ্দিনের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার সাত ইউনিয়নের মধ্যে ছয়টিই নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী বিএম আব্দুল মোমিন জানান, ‘পাউবো-১-এর আওতায় ৩৭৭ দশমিক ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৬০ কিলোমিটার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে নোটশিট পাঠিয়েছি। কিন্তু আপাতত কোনো বরাদ্দ নেই।’ সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী অপূর্ব কুমার ভৌমিক বলেন, পাউবো-২-এর ৪২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ১৫০ কিলোমিটার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। নোটশিট পেশ করার পর সম্প্রতি ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। খুব দ্রুত টেন্ডার আহ্বান করে কাজ শুরু করা হবে। তবে এ অর্থে মাত্র ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কার করা যাবে বলে তিনি জানান।
উপকূলীয় সমস্যা নিয়ে কাজ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিডিপি। প্রতিষ্ঠানটির খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী এসএম ইকবাল হোসেন বিপ্লব বলেন, অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ আর স্লুইস গেট বিপর্যয় ডেকে আনছে উপকূলবাসীর জন্য। চিংড়িঘেরে লবণ পানি তোলার স্লুইস গেটগুলো উপকূলের জন্য মরণ ফাঁদ। নদী-খাল ভরাট হয়েছে। ফলে জলোচ্ছ্বাস হলেই উপকূলে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারে। এছাড়া বহুদিন বেড়িবাঁধগুলোর যথাযথ সংস্কার হচ্ছে না। তাই উপকূলে বাঁধের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
পাউবো খুলনা-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুল ইসলাম জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের বিবরণ ও সংস্কার ব্যয় সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থ না পাওয়ায় সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। পাউবো খুলনা-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী পীযূষ কৃষ্ণ কুণ্ডু বলেন, ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ১৫-২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। কিছু স্থান ভীষণ নাজুক। জোয়ার-ভাটার সময় বেড়িবাঁধ নিয়ে শঙ্কায় থাকতে হয়। তবে সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।’
কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ প্রসঙ্গে খুলনা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান বলেন, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতা থেকে কয়রা উপজেলার অংশটা খুলনার মধ্যে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে উন্নয়ন কমিটির সভায় পাউবোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অবৈধ স্লুইস গেট বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় উপকূলবাসী।
সুত্রঃ বনিক বার্তা/ কৃপ্র/এম ইসলাম