কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ‘ধান কেটে বা কৃষিকাজে শ্রম দিয়ে কাঙ্ক্ষিত মজুরি না পাওয়ায় উত্তরাঞ্চলে কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা কমছে। ধান কাটার মৌসুমে কৃষি শ্রমিকের সংকট তৈরি হয়।তাই অনেক শ্রমিক ঢাকা-সিলেটে গার্মেন্টসে চাকরি নিয়েছেন; কেউ কেউ রিকশা চালান।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এবার পুরো জেলায় ১ লাখ ৯০ হাজার ১৩৮ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে চাষ হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমি। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৭ লাখ ৫৩ হাজার ১২২ মেট্রিক টন ধান। ইতিমধ্যে ৩ থেকে ৪ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান জানান, এক কেজি ধান উৎপাদনে কৃষকের সবমিলিয়ে সাড়ে ১৭ টাকা খরচ পড়ে। এর মধ্যে নিজস্ব শ্রমের মূল্য ৩ টাকা। আর এক কেজি চাল ৩২ টাকা। এ হিসাবে এক মণ ধান উৎপাদন খরচ পড়ে ৭০০ টাকা। তাই এ মুহূর্তে ধান বিক্রি করে কৃষকের লোকসান হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও বগুড়াসহ আশপাশের জেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত কয়েকদিনে দু-তিন দফা ঝড় হওয়ায় কৃষক আতঙ্কিত। তাই ঝড়-বৃষ্টির আগেই তারা ধান গোলায় তুলতে চান। ধান পাকতে শুরু করায় কৃষক কাটা ও মাড়াই শুরু করেছেন; কিন্তু মজুরের অভাবে কাটা ও মাড়াই বিঘিœত হচ্ছে। শ্রমিক পাওয়া গেলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তারা বেশি মজুরি দাবি করছেন।
বগুড়ার নন্দীগ্রামের ফারুক হোসেন, হাফিজার রহমান, এমরান হোসেন, ফজলু মন্ডল প্রমুখ কৃষক জানান, ধান কাটার সময় এলেই দিনমজুরের সংকট দেখা দেয়। প্রতি বিঘা জমির ধান কাটা-মাড়াইয়ের বিনিময়ে আড়াই হাজার টাকার কমে রাজি হচ্ছেন না।শহরতলির কৈচড়, ছিলিমপুর ও কাহালু উপজেলার বড় মোহর, গাবতলীর সুখানপুকুর, সোনাতলার তেকানীচুকাইসহ বিভিন্ন গ্রামে কৃষকের সঙ্গে কথা বলে মজুর সংকটের কথা জানা যায়।
সারিয়াকান্দির চরগোসাইবাড়ির কৃষক বাদশা মিয়া ও রফিকুল ইসলাম জানান, তারা এবার মোট ৭ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন; কিন্তু ব্লাস্ট রোগের কারণে প্রতি বিঘায় ৫ থেকে ৬ মণ ধান পাচ্ছেন। এতে তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
বগুড়া শহরতলির কৈচড়ে জমিতে কথা হয় জাহিদুল ইসলাম, জগদীশ ও অন্য দিনমজুরের সঙ্গে। তারা জানান, প্রতি বছর ইরি-বোরো ও আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের জন্য বগুড়ায় আসেন। বছরের অবশিষ্ট সময় তারা রিকশা-ভ্যান, অটোভ্যান চালিয়ে ও নিজেদের সামান্য জমিতে ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। জমিতে পানি থাকলে জোঁক থাকে। তাই এ সময় প্রতি বিঘা ধান কাটা ও মাড়াইয়ের বিনিময়ে তিন হাজার টাকা মজুরি পেয়ে থাকেন; কিন্তু এবার মাঠ শুকনো থাকায় মজুরি আড়াই হাজার টাকা। থাকা ও তিন বেলা খাওয়া গৃহস্থের। ধান কাটার পর আঁটি বাঁধা ও গৃহস্থের বাড়িতে নিয়ে মাড়াই করতে হয়। তারা জানান, তারা ১২ জন দুই ঘণ্টায় এক বিঘা জমির ধান কাটতে পারেন।
ধান কাটা মজুর সংকট প্রসঙ্গে জাহিদুল ইসলাম জানান, তিনিসহ তার দলের ১২ জন মানুষ ৮ ঘণ্টায় ৪ বিঘা জমির ধান কাটতে পারেন। এ ধান আঁটি বাঁধার পর গৃহস্থের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে মাড়াই করেন। তবে মাড়াই মেশিন থাকলে কষ্ট কিছুটা কম হয়। এতে যে পরিশ্রম হয় তা এ মজুরিতে পোষায় না। তাই তাদের মতো অনেক দিনমজুর পেশা পরিবর্তন করছেন। তিনি আরও বলেন, মজুরদের অনেকে ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি এবং কেউ ঢাকা-সিলেটে গিয়ে রিকশা চালাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ নিজ এলাকায় অটোভ্যান বা রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সারা দিন অটোরিকশা ও ভ্যান চালিয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা থাকে।
এতে কিছু সঞ্চয় না হলেও সংসারের খরচ এবং অন্যান্য ব্যয় মেটানো যায়। অন্য মজুরদের মতো তিনিও মনে করেন, বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় মজুরি বৃদ্ধি করলেই কেবল ধান কাটা মজুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। নচেৎ মজুর আরও কমে যাবে। তখন গৃহস্থদের নিজেদের এ কঠিন কাজ করতে হবে।
সুত্রঃ বনিক বার্তা/ কৃপ্র/এম ইসলাম