কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও ঢলের কারণে বগুড়ার বাঙালি নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সোনাতলা উপজেলায় নতুন করে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। আর অব্যাহত এ ভাঙনে বিলীন হতে বসেছে উপজেলার জোড়গাছা ইউনিয়নের পোড়াপাইকড় খোকশাতলী গ্রাম। এরই মধ্যে ভাঙন এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা। পোড়াপাইকড় খোকশাতলী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ক্রমাগত ভাঙনে গ্রামের বেশকিছু বাড়িঘর এখন নদীতীরে অবস্থান করছে। ঘরের সীমানা আর নদীর সীমানায় কোনো ব্যবধান নেই। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে অচিরেই পুরো গ্রাম নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী।
জানা যায়, নদীতীরে বসবাসকারীদের অধিকাংশই দরিদ্র। এদের অন্য কোনো জমি নেই। তাই যারা পারছেন, তারা নিরাপদ স্থানে চলে গেলেও, অধিকাংশই ঝুঁকি নিয়ে নদীতীরে অবস্থান করছেন। এ অবস্থায় ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
খোকশাতলী গ্রামের বাসিন্দারা জানান, ভাঙন আতঙ্কে রাতে তাদের জেগে থাকতে হয়। কখন যে সবকিছু নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়, তার কোনো ঠিক নেই। তারা অভিযোগ করে জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) শুষ্ক মৌসুমে ভাঙন রোধে তেমন কোনো কাজ করে না। বর্ষা মৌসুম এলে শুধু বাঁশ পোতা আর বালির বস্তা ফেলার মধ্যেই তাদের কাজ সীমাবদ্ধ। এসব ভাঙন ঠেকাতে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে এরই মধ্যে গ্রামের বেশকিছু মানুষ তাদের বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছেন।
হযরত আলী নামে এক বাসিন্দা জানান, বাঙালি নদীতে পানি বাড়লেই এ গ্রামে ভাঙন দেখা দেয়। প্রায় ১২ বছর আগে থেকে এ ভাঙনের শুরু। এ সময় বেশকিছু বসতবাড়ি নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে অধিকাংশ চাষযোগ্য জমি। যারা এখনো নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পাচ্ছে না, মূলত তারই রয়ে গেছেন।
একই এলাকার আব্দুল মজিদ বলেন, ‘জমি যা ছিল তা নদীতে চলে গেছে। এখন শুধু বসতবাড়ি আছে। কয়েক দিন এ ভাঙন অব্যাহত থাকলে তাও থাকবে না। ভাঙন আতঙ্কে এখন পরিবারগুলো পালা করে ঘুমায়। কখন যে ভাঙন শুরু হয় তার ঠিক নেই’।
বগুড়া পাউবো সূত্রে জানা যায়, সোনাতলা-সারিয়াকান্দিতে যমুনা ও বাঙালি নদীর ভাঙন রোধে প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। এর মধ্যে পোড়াপাইকড়ে নদীভাঙন রোধে জলবায়ু ট্রাস্টের অধীনে দুই বছর আগে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ আসে। কিন্তু পরবর্তীতে অজ্ঞাত কারণে সে বরাদ্দ ফেরত যায়। ফলে নদীভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম আটকে যায়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। আবার বরাদ্দ পাওয়া গেলে কাজ শুরু হবে।
জোড়গাছা ইউপি চেয়ারম্যান রোস্তম আলী মণ্ডল জানান, ভয়াল ভাঙনের গ্রামের বেশকিছু পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় তারা কিছু করতে পারছেন না।
কৃপ্র/এম ইসলাম