এসএম মুকুল: ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে নগরকৃষি বা ছাদকৃষি ক্রমশ জনপ্রিয়তা সারা পৃথিবীতেই নগরকৃষি বা ছাদ কৃষিকে জনপ্রিয় করার কাজ চলছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় জোহানেসবার্গের ছাদে ছাদে বাগান তৈরির পাশাপাশি হাইড্রোপনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও পানির অপচয় না করে সেখানে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। জার্মানিতে ১২% ছাদ ‘সবুজ’। জাপান সরকার বলছে, যদি টোকিওর অর্ধেক ছাদ সবুজ হয় তাহলে প্রতিদিন এয়ার কন্ডিশনে ব্যবহৃত জ্বালানি বাবদ এক মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়। তাই টোকিওর আইনে সব বাড়ির নতুন ছাদের অন্তত ২০ ভাগ সবুজায়ন বাধ্যতামূলক।
সিঙ্গাপুর গবেষণা করে বের করেছে, পাঁচতলা বাণিজ্যিক ভবনের ছাদে প্রতিষ্ঠিত বাগান দ্বারা বছরে জ্বালানি খরচের ০.৬-১৪.৫% সাশ্রয় হতে পারে। বাংলাদেশে বিশেষত রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোয় অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে পরিবেশ দিন দিন বিষিয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে জনগণই সচেতন হয়ে শুরু করেছেন ছাদ কৃষি। আশার খবর হচ্ছে ছাদ কৃষি পরিবেশের ভারসাম্যতা রক্ষার পাশাপাশি সবুজ অর্থনীতিতে নতুন সংযোজন হিসেবে আশা জাগিয়েছে।
ছাদ কৃষির মাধ্যমে বাগান বিস্তারে ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে। দালান-কোঠার সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি তাপমাত্রা হ্রাস করা সম্ভব হচ্ছে। ছাদের সবুজ স্তর বিভিন্ন ট্রান্সমিটিং স্টেশন থেকে নিঃসরিত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় প্রতিহত করছে। মোট কথা ছাদ কৃষি নগরজীবনে বহুমাত্রিক সুবিধা ও সম্ভাবনার উৎস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ঢাকা শহরের লোকসংখ্যা অনুযায়ী যে পরিমাণ গাছ থাকার কথা, তার সিকি ভাগের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা যায় না।
পরিবেশ বিপর্যয় রোধে পৃথিবীর দেশে দেশে নগর পরিকল্পনায় যোগ হচ্ছে সবুজ প্রকৃতির। গবেষকরা বলছেন একটা সবজিগাছ তিন মাসের জন্য হলেও বায়ু থেকে তিনজনের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন রিসাইক্লিন করতে পারে। তাহলে তিন মাস কালের সবজি কিংবা বহুবর্ষী ফলের গাছ লাগিয়ে বায়ুর পরিশুদ্ধতা রক্ষা করা সম্ভব হলে আমাদের উচিত ছাদ কৃষিতে মনোনিবেশ করা।
লেখক : কৃষি বিশ্লেষক ও উন্নয়ন গবেষক
কৃপ্র/এম ইসলাম