কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার শীতলক্ষ্যা পূর্বপারের কৃষিজমির চাষাবাদ সুবিধায় ও বন্যা নিয়ন্ত্রণকল্পে একটি সেচ প্রকল্পের নানা অনিয়মের বলি হচ্ছেন হাজারো কৃষক। এ প্রকল্প কর্তৃপক্ষের অবহেলায় কৃষকরা তাদের চাষ উপযোগী ধানী জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না। ফলে নিজের মালিকানাধীন বিঘার পর বিঘা জমি থাকলেও চাল কিনে খেতে হচ্ছে কৃষকদের। কৃষক চাষাবাদ করতে না পেরে কৃষিকাজ ফেলে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন জীবিকার তাগিদে।পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে থাকা ক্যানেলগুলোর সংস্কার না করায় কচুরিপানা, ময়লা-আবর্জনায় ভরে বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। এমনই চিত্র দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী সেচ প্রকল্প (ব্লক এ-১) এলাকায়।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী সেচ প্রকল্পের (ব্লক-এ১) অধীনে পানি সরবরাহ পরিচালনা কমিটির সঙ্গে এ প্রকল্পের কর্মকর্তাদের দেখা নেই পাঁচ বছর ধরে। নিয়মিত অফিস না করে স্থানীয় লাইনম্যান মনিরসহ প্রকল্পাধীন ভাসমান শ্রমিক দিয়ে কোন কোন এলাকা দেখাশোনা করলেও উর্ধতন কর্মকর্তারা তদারকি কাজ ঠিকমতো করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রকল্পটির অধীনে রূপগঞ্জের দুটি পৌরসভা কাঞ্চন ও তারাব আর তিনটি ইউনিয়ন ভুলতা, মুড়াপাড়া ও গোলাকান্দাইলসহ নরসিংদীর পশ্চিমাঞ্চল মধাবদীর কিছু অংশ রয়েছে। বেশিরভাগ এলাকায়ই নানা সমস্যা রয়েছে। তবে রূপগঞ্জের মিঠাব, আতলাশপুর, কাঞ্চন ও বেরক মৌজার প্রায় ৭শ’ বিঘা আবাদি জমিতে দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত পানি আটকে থাকায় এ সমস্যা আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
প্রকল্পাধীন স্থানীয় কার্যালয় বানিয়াদি হতে হাটাব হয়ে টেংরারটেক পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার (এফআইসি ক্যানেল) নামে একটি প্রধান খাল রয়েছে। এ খালের ওপর কচুরিপানা ও ময়লা-আবর্জনার স্তূপ পড়ে থাকায় পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে হাটাব বাড়ৈ বিলের ৩শ’ বিঘা, শিমুলতলা বিলের ২শ’ বিঘা ও টেংরারটেক বিলের ২শ’ বিঘাসহ আবাদযোগ্য ফসলি জমিতে পানি আটকে আছে পাঁচ বছর ধরে। একই দৃশ্য দেখা গেছে পিআইসিভুক্ত ছোট ক্যানেলগুলোর। সূত্র জানায়, প্রকল্পের দায়িত্বরত ল্যান্ড বিভাগের এসও এরফান নিয়মিত অফিস করেন না। মাসে দু’-একবার লাইনম্যানদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন। আর এতটুকু দায়িত্বের মধ্যেই বিশাল প্রকল্পটি পরিচালনা করছেন তিনি। এ সুযোগে ক্যানেলপারের জমি, রাস্তাঘাট দখলদারের কব্জায় চলে যাচ্ছে।
পানি নিষ্কাশন খালগুলো নিয়মিত সংস্কার না করায় বিলের পানি আটকে ফসলি জমি ডুবে আছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, কৃষকের জমিতে বছরে দুবার ফসল আবাদ করার সুবিধার জন্যই এ সেচ প্রকল্প করা হয়েছে। তবে ঠিকমতো তদারকি না করায় খালগুলো ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। আর তাতে পানি আটকে বিলের চাষাবাদযোগ্য ইরি জমি পতিত পড়ে রয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুরাদুল হাসান বলেন, সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে থাকা কৃষিজমি পানিতে ডুবে থাকায় স্থানীয় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ প্রকল্পের অধীনে বেশকিছু আইপিএম কৃষক মাঠ ছিল। এখন সেখানে এ ধরনের মাঠের সংখ্যা কমে গেছে। এ বিষয়ে উর্ধতন মহলকে জানিয়েছেন বলে জানান তিনি। এসব বিষয়ে পানি সরবরাহ কমিটির (আঞ্চলিক) সভাপতি মনির হোসেন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও স্যারকে বিষয়গুলো অবহিত করেছি।
তবে লোকবল না থাকায় এ সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না। মনির হোসেন আরও বলেন, এফআইসি-২-এর অধীনে খালগুলোতে ময়লা-আবর্জনা ও কচুরিপানা জমে থাকায় পানিপ্রবাহ ও সেচকাজ ব্যাহত হচ্ছে। একই ভাবে মাটি ভরাট হয়ে পিআইসি খালের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে অনেক বিলের মধ্যেই পানি আটকে অনাবাদী জমির পরিমাণ বাড়িয়ে তুলছে। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী সেচ প্রকল্পের (ব্লক এ-১) এসও প্রকৌশলী এরফান হোসেন (ল্যান্ড বিভাগ) বলেন, লোকবল কম তাই কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে এ সমস্যা পাঁচ বছর ধরে নয় বলে দাবি করেন তিনি। গত তিন বছর যাবত এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিষয়গুলো উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। নিয়মিত অফিস করেন কিনা- এ বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
সুত্রঃ জনকণ্ঠ / কৃপ্র/এম ইসলাম