কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ মংলাসহ আশপাশের এলাকার চিংড়িঘেরে প্রায় এক মাস ধরেই চিংড়ি মাছ মারা যাচ্ছে। তবে গত দুই সপ্তাহে এ হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। প্রচণ্ড দাবদাহের সঙ্গে পানির অভাব, অতিরিক্ত লবণাক্ততা ও বিরূপ জলবায়ুই এ বিপর্যয়ের কারণ বলে মত মৎস্য বিভাগের। আর হঠাত্ই এ মড়কে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চিংড়িচাষীরা। এ হারে চিংড়ি মরতে থাকলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত দুই সপ্তাহে এখানকার অধিকাংশ ঘেরে হঠাত্ করেই বিপুল সংখ্যক চিংড়ি মরতে শুরু করেছে। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে মরা চিংড়ির সংখ্যা। এ অবস্থায় মংলা অঞ্চলে এবার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম চিংড়ি উৎপাদন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মংলা উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, মংলাসহ আশপাশের এলাকায় প্রায় আড়াই যুগ থেকে ধানের পরিবর্তে বাগদা চাষ প্রাধান্য পেয়ে আসছে। বর্তমানে মংলার ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর কৃষিজমির মধ্যে ১০ হাজার ৮৫৮ হেক্টরেই বছরের আট মাস চিংড়ি চাষ হয়। এখানে ছোট-বড় মিলিয়ে চিংড়িঘের রয়েছে ৫ হাজার ৬০৪টি। গত মৌসুমে এখানে ৫ হাজার ৫০০ টন চিংড়ি উৎপাদন হয়। এবার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫ হাজার ৮০০ টন। কিন্তু বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে লক্ষ্যমাত্রার থেকে উৎপাদন অনেক কম হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মংলা উপজেলার বৈদ্যমারী গ্রামের সাবেক ইউপি মেম্বার ও ঘের ব্যবসায়ী মো. করিম জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে ঘেরে পোনা ছাড়া হয়। এর পর এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে মাছ মরে ভেসে ওঠা শুরু করে। মরা চিংড়িগুলোর রঙ লালচে হয়ে যাচ্ছে। যেগুলো বেঁচে আছে, সেগুলো বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে।
সুন্দরবন ইউনিয়নের বাঁশতলা গ্রামের চিংড়িঘের ব্যবসায়ী আনিস জানান, তিনি এবার শতাধিক বিঘা জমি লিজ নিয়ে ঘের করে বাগদা চাষে প্রায় ১৭ লাখ টাকা লগ্নি করেছেন। মৌসুমের মাঝামঝি সময়েই এসব ঘের থেকে লগ্নির অধিকাংশ টাকাই উঠে আসার কথা ছিল। কিন্তু যে হারে চিংড়ি মারা যাচ্ছে, তাতে তার ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, মাছ মরে যাওয়ায় এরই মধ্যে অনেক চাষী সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন। মহাজন ও ব্যাংক থেকে নেয়া লোনের টাকা পরিশোধ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। চিলা, আন্ধারিয়া, বুড়বুড়িয়া, জয়খা গ্রামের বেশ কয়েকজন চিংড়িচাষী ক্ষোভের সঙ্গে জানান, চিংড়ি রফতানি করে বিপুল পরিমাণ৬ বৈদেশিক মুদ্রা আয় এ খাতসংশ্লিষ্টদের সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেয় না।
ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করেন, উপজেলা মৎস্য অফিসও চিংড়িচাষীদের সচেতন করার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। তারা জানান, এখন পর্যন্ত কী কারণে মাছ মারা যাচ্ছে বা এ অবস্থায় কী করণীয়, সে বিষয়ে মৎস্য অফিস থেকে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে মংলা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ফেরদৌস আনসারী বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে বাগদা চিংড়ি মারা যায়। তবে এবার প্রচণ্ড দাবদাহ, পর্যাপ্ত পানি না থাকা ও অতিরিক্ত লবণের কারণে বেশি মাছ মারা যাচ্ছে। এছাড়া মৌসুমের শুরুতে ঘের প্রস্তুত করার সময়ও চাষীরা মাটির সঠিক পরিচর্যা করেন না। অন্যদিকে নিয়মিত ফরমুলেটেড খাদ্য সরবরাহ না করা, পানি পরিবর্তন ও বায়ু সঞ্চালনের ব্যবস্থা না করার কারণেও মাছ মারা যাচ্ছে।’
চিংড়িচাষীদের সচেতনতা তৈরিতে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চাষীদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। সেমিনারের মাধ্যমেও তাদের সচেতন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আর কোনো এলাকায় মড়ক লাগার খবর পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে গিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।’ তবে এ কর্মকর্তাও চলমান অবস্থার উন্নতি না হলে এবার চিংড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বহুলাংশে কমে যাওয়ার আশঙ্কার কথা স্বীকার করেন।
সুত্রঃ বনিক বার্তা/ কৃপ্র/এম ইসলাম