কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নেত্রকোনার খালিয়াজুরী হাওরে অকাল বানের পানিতে ধান, মাছ ও হাঁস ধংসের পর এবার কৃষকের শেষ সম্বল ভিটে-মাটিটুকুও গ্রাস করছে নদী ভাঙ্গন। ঢেউয়ের আঘাতে ভেঙে পড়ছে অরক্ষিত বাড়িঘর। কৃষকরা কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাও নিতে পারছেনা। সম্প্রতি, বাঁধভাঙা ঢলের পানিতে সৃষ্ট অকাল বন্যায় খালিয়াজুরীর প্রায় শতভাগ বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়াসহ মাছ ও হাঁসের ধংসলীলা শেষ হতে না হতেই ঢেউয়ের আঘাতে প্রায় অর্ধশত গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আগাম এ ভাঙন ঠেকানোর প্রস্তুতি আর অর্থ না থাকায় নিশ্চিহ্ন হচ্ছে অসংখ্য ভিটে-বাড়ি।
স্থানীয়রা জানান, অন্যান্য বছর হাওরে পানি আসে আষাঢ় মাসে। তাই হাওর পাড়ে ঢেউয়ের কবল থেকে বাড়ি বাঁচাতে প্রতিরক্ষা বাধ দেয়া হতো জ্যৈষ্ঠের শেষ দিকে। বৈশাখী ফসলের আয়ে বাঁশ, প্লাস্টিক বস্তা কিংবা বাঁশের বেড়াসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনে এনে আগের বছরগুলোতে বাড়ির প্রতিরক্ষা বাধ নির্মাণ করতে পারলেও এবার তা অনেকের হয়ে ওঠেনি। এ বছর চৈত্রের শুরুতেই হঠাৎ বন্যার পানি এসে হাওরের ফসলসহ ঘর-বাড়িতে হানা দেয়। এতে ফসল হারিয়ে এলাকাবাসী অর্থ সংকটে পড়েছে এবং ঘর-বাড়ি রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনতে পারছেন না বলে ঢেউ হচ্ছে অপ্রতিরোধ্য।
কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের নাজিরপুর গ্রামের বাসিন্দা সুরঞ্জিত দাস বলেন, ‘‘ইবার বানের পানির ঢেউয়ে আমার বসত ঘরের আধা শতাংশ জায়গা ভাইঙ্গা নিছে। অহন আর আধা শতাংশ জায়গা আছে হেইডা বাইনদা রাকমু কেমনে এই চিন্তায় দিশা পাইতাচিনা। ইবার সব ফসল তলাইয়া যাওয়ায় হাতে ট্যাহা নাই। এর লাইগ্যা অহন বউ-পুলাপানের খাওন ঠিকমত যোগাইতে পারতাচিনা, মাজনের ঋণ পরিশোধ করতে পারতাচিনা, বাড়িও বাইনদা রাখতে পারতাচিনা।’’
দেখা গেছে, ওই গ্রামে সুরঞ্জিত দাসের মতো দিশেহারা রনধির সরকার, সিবাশ সরকার, অলক সরকার, বাবলু সরকার, প্রসেন সরকার, সুবিরসরকারসহ আরো ৩০/৪০টি পরিবার বাড়ি ভাঙনের দুরাবস্থায় পড়েছে। তারাও টাকার অভাবে বাড়ির প্রতিরক্ষা বাধ মেরামত করতে পারছেন না।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সামছুজ্জামান তালুকদার সুয়েবসহ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জানান, নগর ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ি নতুন পাড়া, তাতিয়া উত্তর পাড়া, পাচঁগাছিয়া, তাতিয়া, হায়াত্পুর, চাকুয়া ইউনিয়নের দাউদপুর, মুকিমপুর, গোবিন্দপুর, পাতরা, সুলতানপুর, বাগনবাড়ি, মেন্দিপুর ইউনিয়নের জগন্নথপুর, ইসলামপুর, রসুলপুর, বানোয়ারি, খালিয়জুরী সদর ইউনিয়নের গছিখাই, কাদিরপুর, যুগিমারা, মমিননগর, গাজীপুর ইউনিয়নের চড়পাড়া, পাচহাট, বয়রা, বাতুয়াই, পাচহাট বাজার, দাউদপুর, কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর, কুতুবপুর, কৃষ্ণপুর নামাপাড়া গ্রামগুলো ব্যাপকভাবে ভাঙলেও অর্থের অভাবে তা ঠেকানো যাচ্ছে না।
ইউএনও মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ জানান, তিনি ভাঙন কবলিত কয়েকটি গ্রাম পরিদর্শন করেছেন এবং দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের ঘর-বাড়ি রক্ষার্থে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারি সহায়তা চেয়েছেন। স্থানীয় এমপি এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান রেবেকা মমিন বলেন, এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো হচ্ছে।
সুত্রঃ ইত্তেফাক / কৃপ্র/এম ইসলাম