কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ মাগুরার প্রতিটি গ্রামেই গড়ে উঠেছে লিচু বাগান। চলতি মৌসুমে এখানে লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। স্থানীয় লিচু চাষিরা লিচু বিক্রি করে এ বছর প্রায় ১৫ কোটি টাকা আয় করবেন বলে আশা করছেন । স্থানীয় কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, জেলার ৫’শ ৭০হেক্টর জমিতে প্রায় আড়াই হাজার লিচু বাগান রয়েছে। যার মধ্যে কেবল সদর উপজেলাতেই রয়েছে প্রায় দুই হাজার লিচু বাগান। যেখানে বোম্বে, চায়না থ্রি, মোজাফ্ফর ও দেশি জাতের লিচু উৎপাদিত হয়ে থাকে। ১৯৯৪ সাল থেকে মাগুরার হাজরাপুর, হাজিপুর, রাঘবদাইড় ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে লিচুর চাষ শুরু হয়। এসব এলাকার মাটি এবং আবহাওয়া লিচু চাষের উপযোগী। এ ছাড়া অন্যান্য ফসলের তুলনায় লিচুর চাষ লাভজনক হওয়ায় এ এলাকার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই গড়ে উঠেছে লিচু বাগান।
ইতিমধ্যে বেপারিরা মাগুরার এসব বাগান থেকে লিচু কিনে তা বিক্রয়ের জন্য ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সরবরাহ করছে। বর্তমানে জেলা বিভিন্ন লিচু বাগান থেকে দেশি জাতের লিচু স্থানীয় বাজারসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। উন্নত জাতের বোম্বে, চায়না থ্রি লিচু আরো ১০ থেকে ১২ দিন পর বিক্রির জন্য গাছ থেকে তুলে তা বিক্রির জন্য বাজারে পাঠানো হবে।
হাজরাপুর গ্রামের কৃষক মুকুল খান জানান, ধারাবাহিক সাফল্যের কারণে মাগুরার হাজরাপুরসহ উল্লেখিত এলাকগুলো ইতিমধ্যেই লিচু পল্লী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এ অঞ্চলের মাটি লিচু চাষের উপযোগী হওয়ায় স্থানীয় চাষিরাও এই চাষে ভাল ফলন পাচ্ছেন। অধিক উৎপাদনের পাশাপাশি গুণগত মান ভাল হওয়ায় লিচু বিক্রি করে তারা প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা আয় করে থাকে। লিচু চাষ সফল করতে কৃষি বিভাগ থেকে তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা দিচ্ছে। বিশেষ করে বিষমুক্ত লিচু বিক্রিতে কৃষি বিভাগ থেকে তাদের প্রশিক্ষণসহ উঠান বৈঠকের মাধ্যমে কৃষকদের সচেতনতামূলক পরামর্শ দেয়াসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে। এ বছর জেলার বিভিন্ন বাগন থেকে লিচু বিক্রি করে প্রায় ১৫ কোটি টাকা আয় হবে বলে ধারনা করছেন তিনি।
সদর উপজেলার ইছাখাদা গ্রামের লিচু চাষি মিটুল হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে লিচুর ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকরা আনন্দিত। ইতিমধ্যেই বাগান থেকে লিচু বিক্রি শুরু হয়েছে। বর্তমানে স্থানীয় জাতের লিচু বাগন থেকে বেপরীরা ক্রয় করে তা বিক্রির জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ১০০টি দেশী জাতের লিচু মাগুরার বিভিন্ন এলাকায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, তার তিনটি লিচু বাগান রয়েছে। এসব বাগানে স্থানীয়সহ উন্নত জাতের লিচু রয়েছে। এসব লিচু তিনি ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলেন আশা করছেন।
একই এলাকার অপর লিচু চাষি আবুল বাসার জানান, এ বছর তার দুটি বাগানে লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। এ বাগান থেকে প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকার লিচু বিক্রি হবে। ভালো ফলন ও দাম পেয়ে কষকরা খুশি।
সরেজমিন হাজরাপুর ইউনিয়নের ইছাখাদা গ্রামের বিভিন্ন লিচু বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যাপারিদের উপস্থিথিতে লিচু বাগানে শ্রমিকরা গাছ থেকে লিচু পড়ে তা বাজারে সরবরাহ করার জন্য ব্যস্ত সময় পার করছে। লিচু বাগানে কাজ করা শ্রমিক জহুর শেখ, শুকুর আলী আবুল হোসেন, আলমগীর হোসেনসহ অনেকে জানান, লিচু বাগানে কাজ করে তাদের প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হয়। যা দিয়ে তারা সংসারের ব্যায় নির্বাহের পাশপাশি ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার খরচ বহন করেন। লিচু মৌসুমে তাদের মত আরো অনেক শ্রমিক লিচু মৌসুমে বাগান পরিচর্যাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করে তাদের জীবীকা নির্বাহ করে থাকে।
লিচু ব্যাপারি ফরিদ শাহ, নজরুল ইসলামসহ অনেকে জানান, মাগুরার লিচু উন্নতমানের হওয়ায় তারা প্রতি বছর লিচু বাগান থেকে লিচু কিনে তা বিক্রয়ের জন্য বাজারে পাঠান। এতে কৃষকদের পাশাপাশি তারাও অর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুহল আমীন জানান, লিচু চাষ সফল করতে এর পোকা দমন, ফল ঝরা, ফাঁটারোগসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধে কৃষকদের প্রতিনিয়ত প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বিষমুক্ত লিচু বাজারে বিক্রির জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সচেতনতামূলক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর লিচুর ভালো ফলনও হয়েছে। চলতি মৌসুমে মাগুরার চাষিরা লিচু বিক্রি করে অন্তত পক্ষে ১৫ কোটি টাকা আয় করতে সক্ষম হবে আশা করছেন তিনি।
কৃপ্র/এম ইসলাম