কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া দপ্তরের মতে জলবায়ু পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় আগামী ২০ বছরের মধ্যে বজ্রপাত বর্তমানের তুলনায় ৫০ শতাংশ বাড়বে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশেও বজ্রপাত আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। সঙ্গে প্রাণহানির সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী ‘সায়েন্স’ জানায়, পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বজ্রপাতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। ডেভিড রম্প ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় বজ্রপাত নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, ২০০০ সালে যেখানে বছরের একটি নির্ধারিত সময়ে দুইবার বজ্রপাত রেকর্ড করা হয়েছে, সেখানে এখন ওই একই সময়ে তিনবার বজ্রপাত হচ্ছে। তার হিসেবে তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে বজ্রপাতের হার বাড়ে ১২ শতাংশ।
জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, অত্যধিক শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবহার, গ্রিন হাউজ গ্যাসের নির্গমন বৃদ্ধির কারণে গোটা বিশ্বেই বজ্রপাত বাড়ছে। অধ্যাপক রম্প মনে করেন, উল্লিখিত কারণে ভূ-মণ্ডলে নাইট্রোজেন অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে। এই গ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ওজোন স্তর এবং মিথেনের মতো ক্ষতিকর গ্যাসও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তখন বজ্রপাতের হার কমতে পারে। রম্প আরো বলেন, একবিংশ শতাব্দীর শেষে ধরিত্রীর তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে বজ্রপাতের হার আরো বাড়তে পারে।
বাংলাদেশে বজ্রপাতের ঝুঁকি ভয়ানক রূপ ধারণ করেছে। বজ্রপাতজনিত কারণে গত সাত বছরে ১ হাজার ৭৪৪ জন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আগে সাধারণত তাল গাছ, নারিকেল গাছ ইত্যাদি গাছপালায় বজ্রপাতের ঘটনা বেশি লক্ষ্য করা যেত। কিন্তু এখন অনেক সময় সরাসরি মানুষের ওপরই আঘাত হানছে। বাংলাদেশে হাওর এলাকাকে এখন বজ্রপাতের প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। কারণ গত কয়েক বছরে সুনামগঞ্চ, হবিগঞ্চ, সিলেট, কিশোরগঞ্জ প্রভৃতি অঞ্চলে বজ্রপাতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বেশি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে গত ২২ এপ্রিল পর্যন্ত চলতি বছর দেশে বজ্রপাতে ২২ জন মারা গেছেন। তবে ডিজাস্টার ফোরাম নামক একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হিসাব মতে, ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সারাদেশে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৭২২ জন। এর মধ্যে ২০১০ সালে ১২৩ জন মারা গেছে। পরের বছরগুলোতে যথাক্রমে ১৭৯, ৩০১, ২৮৫, ২১০, ২৭৮ এবং ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ৩৫০ জন নিহত হয়।
কৃপ্র/এম ইসলাম