কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ রংপুর চরাঞ্চলের আশপাশের হাট বাজারগুলোতে চলছে মিষ্টি কুমড়ার জমজমাট কেনাবেচা। এখানকার হাট বাজার থেকে পাইকাররা মিষ্টি কুমড়া নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন বাজারে। আর এ বছর হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়ার চাহিদাকে পুঁজি করে গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিস্তাচরের কৃষকরা। গত মার্চের শেষ দিকে চরাঞ্চলের এসব বিক্রয়কেন্দ্রে মিষ্টি কুমড়া কেনাবেচা শুরু হয়েছে, যা চলবে জুলাই পর্যন্ত।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী কচুয়া, গোডাউনের হাট, গার্নারপাড়, মহিপুর বাজার, কাউনিয়া উপজেলার নিউপাড়া, তালুক শাহপাড়া ও কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার নাজিমখাঁয়ের অস্থায়ী মিষ্টি কুমড়ার বিক্রয়কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তিস্তা নদীর আশপাশের চরের জমিতে উত্পাদিত কুমড়া এসব কেন্দ্রে নিয়ে আসছেন।
তিস্তাচরের কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর চাহিদা না থাকায় তাদের বেশ লোকসান হয়েছে। ওই বছর কৃষকরা প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া ৪ টাকারও কমে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। এমনকি যেসব কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় স্টক করেছিলেন, তাদের অনেকেরই কুমড়া বিক্রি না হওয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে। তবে এ বছর হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়ার ব্যাপক চাহিদা থাকায় তারা আগের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, প্রকারভেদে বিভিন্ন দামে তারা কৃষকদের কাছে থেকে কুমড়া কিনছেন। মৌসুমের শুরুতে ছোট আকারের প্রতি ১০০ কুমড়া ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে কিনেছিলেন। আর কেজি হিসাবে প্রতি কেজি কিনেছেন ৫ থেকে সাড়ে ৫ টাকায়। পরে তা পাইকারদের কাছে সাড়ে ৬ থেকে ৭ টাকা কেজিদরে বিক্রি করেছেন। তবে বর্তমানে দেশী মিষ্টি কুমড়া ৭-৮ টাকা ও হাইব্রিড প্রতি কেজি ১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা কুমড়া কেনার জন্য বিক্রয়কেন্দ্রেগুলোয় ভিড় করছেন। পাইকার মজিবুর রহমান বলেন, ‘দুই মাসে তিনি প্রায় ৪০ টন কুমড়া নরসিংদী, ভোলা, বরিশাল ও পটুয়াখালীতে পাঠিয়েছেন।
গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর বিজয় গ্রামের মিষ্টি কুমড়া চাষী মোর্শেদা বেগম ও বুড়িডাঙ্গি গ্রামের মোমেনা বেগম জানান, গত বছর তাদের উত্পাদিত কুমড়া ভালো বিক্রি হয়নি। কিন্তু এ বছর তারা হাইব্রিড জাতের কুমড়া আবাদ করেছেন। আর বাজারে এ জাতের কুমড়ার বেশ চাহিদা রয়েছে। ফলে বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা এসে ভালো দাম দিয়ে তাদের কুমড়া কিনছেন।
চাষীরা জানান, তাদের অধিকাংশেরই নিজস্ব জমি নেই। চরের অনাবাদি জমিতে তারা এ কুমড়া চাষ করছেন। ‘প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন বাংলাদেশ’ নামে একটি এনজিও তাদের কুমড়ার বীজসহ নানা কৃষি উপকরণ ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছে। তারা এ সহায়তা তিন বছর পর্যন্ত পাবেন বলে জানান।
প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন রংপুর অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া উপজেলা এবং কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার চরে ৩৫টি স্পটে ১৭ দশমিক ৫ একর জমিতে মোট ৬ লাখ ৩০ হাজার মিষ্টি কুমড়ার চারা রোপণ করা হয়। আর উদ্যোগের সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৫০ জন ভূমিহীন নারী।
প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশনের বিজনেস ফেসিলেটর রোখসানা বিলকিস বলেন, ‘বিক্রয়কেন্দ্রগুলোয় প্রথম দিকে গড়ে ১৩ থেকে ১৫ টন কুমড়া কেনাবেচা হয়েছে। গত বছর চাহিদা না থাকায় কৃষকরা ভালো দাম পাননি। তবে এ বছর উত্পাদিত হাইব্রিড কুমড়ার ব্যাপক চাহিদা থাকায় তারা ভালো দাম পাচ্ছেন। আর এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ইউডিপিএস।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখন কোনো ধরনের সহায়তা ছাড়া নিজেরাই কুমড়া চাষ করেছেন, এমন কৃষকের সংখ্যা হচ্ছে দিন দিন বাড়ছে। এ বছর দেড় শতাধিক কৃষক নিজ খরচে কুমড়া আবাদ করেছেন।’
সুত্র, বনিক বার্তা/ কৃপ্র/এম ইসলাম