কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নাটোরে বিভিন্ন নদী দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে স্থায়ী অবকাঠামো। নাগর নদ, গুড় ও চন্দনাসহ বিভিন্ন নদী দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন, বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। স্থানীয়দের দাবি, এসব স্থাপনা নির্মাণের ফলে ব্যাহত হবে নৌ-চলাচল; একই সঙ্গে হুমকির মুখে পড়বে নদীরক্ষা বাঁধ। সম্প্রতি সিংড়া পৌরসভার কাঁটাপুকুরিয়া মহল্লায় নাগর নদের তিন শতক জমি দখল করে একটি পাঁচতলা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছে। যদিও নির্মাণাধীন ওই ভবনের মালিক চিকিত্সক আহাদ আলী জানান, তিনি নিজের জমিতেই এ ভবন নির্মাণ করছেন।
তবে সিংড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কাঁটাপুকুরিয়া মৌজার পাঁচ নম্বর দাগের ওই তিন শতক জমি অনেক আগেই নদে বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু সম্প্রতি স্থানীয় চিকিত্সক আহাদ আলী ও আমিন উদ্দিন নদের ভেতরের জমি দখল করে পাঁচতলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। এতে নদে নৌ-চলাচল ব্যাহত ও নদরক্ষা বাঁধ বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জানা যায়, এর আগেও ২০১৩ সালে এখানে নদী দখল করে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন এ দুই চিকিত্সক। তখন এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনারের কার্যালয় থেকে জরিপ শেষে নির্মিত অবকাঠামো সরিয়ে নিতে বলা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সিংড়া সহকারী জজ আদালতে তত্কালীন সহকারী কমিশনারের বিরুদ্ধে মামলাও করেন ডা. আহাদ আলী। মামলায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেয়া পর্যন্ত আদালত উভয়পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিলে ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সম্প্রতি আবারো ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করেন ওই দুই চিকিত্সক। সরেজমিন দেখা যায়, নদে আরসিসি পিলার করে ভবনের নিচের অংশের কাজ শেষ করা হয়েছে। এখন চলছে প্রথম তলার কাজ।
সিংড়া পৌর ভূমি কর্মকর্তা মনীন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী জানান, তিনি এসিল্যান্ডের নির্দেশ অনুযায়ী সরেজমিন নির্মাণাধীন ওই ভবন পরিদর্শন করেন। ভবনটি পুরোপুরি নদের ভেতর করা হচ্ছে। এতে নিশ্চিতভাবে নৌযান চলাচল ব্যাহত হবে, রয়েছে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও। তাছাড়া নদের গতিপথ বাধাগ্রস্ত হয়ে পানির চাপে সেখানকার শহররক্ষা বাঁধও ভেঙে যেতে পারে। যদিও চিকিত্সক আহাদ আলীর দাবি, ওই জমি তার। কিন্তু নদী শিকস্তি আইন অনুযায়ী ওই জমির মালিক এখন সরকার। তাই তিনি তাত্ক্ষণিকভাবে ওই চিকিত্সককে ভবনের আর কোনো কাজ না করার জন্য অনুরোধ করেছেন।
আর নদী দখল করে কেউ ভবন নির্মাণ করলে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন সিংড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুশফিকুর রহমান। এছাড়া সিংড়া পৌর শহরের বাজারসংলগ্ন নাগর ও গুড় নদ দখলদারদের কবলে ক্রমে ছোট হয়ে আসছে। এরই মধ্যে নদ দখল করে বাসভবন, দোকান ও বহুতল ভবন নির্মাণ করছে একশ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তি। এতে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ হারিয়ে শহররক্ষা বাঁধসহ কৃষকের ফসলি জমি হুমকির মধ্যে পড়ছে। আর এর বিরুদ্ধে এলাকার সচেতন মহল একাধিকবার অভিযোগ জানালেও দখলদারদের উচ্ছেদে ব্যর্থ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে লালপুর উপজেলার ওয়ালিয়া ইউনিয়নের দিলালপুর রায়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে চন্দনা নদী দখল করে আরসিসি পিলার দিয়ে পাকা ঘর নির্মাণ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। সম্প্রতি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু তাহির সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। কিন্তু প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পুনরায় গত শনিবার থেকে পুরোদমে ঘরের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, দিলালপুর রায়পুর গ্রামের বাবলু, মায়নুর ও আনোয়ার আলী চন্দনা নদীতে এ ভবন নির্মাণ করছেন। শুধু তাই নয়, এরই মধ্যে নির্মাণাধীন ভবনের ঘর ভাড়া দেয়ার জন্য কেউ কেউ ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকাও নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত বাবলু বলেন, ‘চন্দনাসংলগ্ন রাস্তাটি ভেঙে যাচ্ছে, তাই পিলার দিয়ে মাটি ফেলে তা রক্ষার জন্য কাজ করছি। তবে সেখানে একটি অফিস করার পরিকল্পনা রয়েছে।’ তবে ঘর ভাড়া দেয়ার জন্য ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, জেলা পরিষদের নির্দেশনা নিয়ে শিগগিরই চন্দনা নদীর দখলকৃত জায়গা থেকে পিলারগুলো উচ্ছেদ করা হবে। নদী দখলের বিষয়ে নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন বলেন, ‘নদী দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া দখলদারদের উচ্ছেদ করে নদীর স্বাভাবিক গতি বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হবে।’
সুত্র, বনিক বার্তা/ কৃপ্র/এম ইসলাম