কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ চলমান দাবদাহে খুলনা অঞ্চলের তিন জেলায় চিংড়ি পোনায় ব্যাপক হারে মড়ক দেখা দিয়েছে। গত দুই সপ্তাহে এসব এলাকার প্রায় দুই হাজার হেক্টর ঘেরের চিংড়ি মরে গেছে। চিংড়ির মড়কে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষীরা। জানা গেছে, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার উপকূলীয় এলাকায় আক্রান্ত ঘেরের সংখ্যা বেশি। মত্স্য কর্মকর্তারা বলছেন, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ভাইরাস আক্রমণ করছে। বৃষ্টি হলে আবারো স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ভাইরাস ফ্রি উন্নত মানের পোনা ব্যবহার করা সত্ত্বেও মড়ক কিছুতেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
জানা গেছে, তিন দশক ধরে খুলনার দাকোপ, পাইকগাছা, কয়রা, সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগর, বাগেরহাটের মংলা ও রামপাল এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে চিংড়ি চাষ। সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে অনেকে আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ২০০২ সাল থেকে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ির চাষ শুরু করেন। বর্তমানে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ির চাষ চলছে।
কয়রা উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘ভাইরাস ফ্রি উন্নত মানের চিংড়ি পোনায় ভাইরাসের আক্রমণরোধে চিংড়িচাষীদের নিয়ে সেমিনার করে করণীয় সম্পর্কে দিকনিদের্শনা দেয়া হচ্ছে।’
নাছিরপুর গ্রামের চিংড়িচাষী আব্দুল মজিদ গাজী বলেন, ‘আমি ১৫ দিন আগে থেকে চিংড়ি ধরা শুরু করেছি। এ বছর বাজারে চিংড়ির দাম ভালো আছে, কিন্তু ভাইরাসে ক্ষতি করছে, ঘেরে নামলেই মরা চিংড়ি পাচ্ছি। আমার মনে হয়, বাগদা চিংড়িতে পোনার জন্মলগ্নতেই ট্যাংকি থেকে ভাইরাস আসছে।’
আরেক ঘের ব্যবসায়ী অমিত হালদার বলেন, ‘চিংড়িতে ভাইরাসের কারণে বছরের প্রথমেই আমরা একেবারেই ধরাশায়ী। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চিংড়ি চাষ করেছি, কীভাবে সেটা পরিশোধ করব তা ভেবে পারছি না’।
পাইকগাছার সাপোয়ান অ্যাকোয়া কালচার লিমিটেডের ব্যবস্থাপক অমর কুমার দাস জানান, তার ৮০ বিঘা জমির ২০টি পুকুরের চিংড়ি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি টাকা। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারা নতুন পোনায় আবারো চাষ শুরু করছেন। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলেও জানান তিনি।
আধা নিবিড় পদ্ধতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত প্রবায়োটিক ও মিনারেলস সময়মতো না পাওয়ায় এ ধরনের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এতে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে।
পাইকগাছা উপজেলা সিনিয়র মত্স্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে অধিক তাপমাত্রা ও ঘেরে পোনা ছাড়ার সময় নার্সিং পয়েন্টে না রাখার কারণে চিংড়িতে ভাইরাসের আক্রমণ হয়েছে। ঘেরে পোনা ছাড়ার আগে তা ভাইরাসমুক্ত কিনা নিশ্চিত হতে হবে।’ বৃষ্টি হলে ভাইরাস থাকবে না।
এদিকে মংলাসহ আশপাশের এলাকায় বাগদা চিংড়ি চাষে বিপর্যয় নেমেছে। মংলা পৌরসভাসহ ছয় ইউনিয়নের চিংড়িঘেরগুলোয় এক মাস ধরে ব্যাপক মাছ মরে যাচ্ছে। তবে গত দুই সপ্তাহে এ পরিমাণ আরো বেড়েছে। এভাবে চিংড়ি মরতে থাকলে চাষীরা ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন।
মংলা উপজেলা মত্স্য অফিস সূত্রে জানা যায়, লবণ পানি অধ্যুষিত মংলাসহ আশপাশের এলাকায় প্রায় আড়াই যুগ আগ থেকে ধানের পরিবর্তে বছরের প্রায় আট মাসই বাগদা চিংড়ি চাষ হয়ে আসছে। মংলার ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর কৃষিজমির মধ্যে ১০ হাজার ৮৫৮ হেক্টর জমিতে বাগদা চাষ হয়। ছোট-বড় মিলিয়ে ঘেরের সংখ্যা ৫ হাজার ৬০৪টি।
সুন্দরবন ইউনিয়নের বাঁশতলা গ্রামের চিংড়িঘের ব্যবসায়ী আনিস জানান, শতাধিক বিঘা জমি লিজ নিয়ে এবার বাগদা চাষে প্রায় ১৭ লাখ টাকা লগ্নি করেছেন তিনিসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী। এবারের চলতি মৌসুমের মাঝামাঝি এ ঘের থেকে যে পরিমাণ মাছ পাওয়ার আশা ছিল, তাতে লগ্নি করা টাকার অধিকাংশই উঠে আসার কথা। তবে ঘেরে মড়ক দেখা দেয়ায় এখন লগ্নিকৃত অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। উপজেলা সিনিয়র মত্স্য কর্মকর্তা ফেরদৌস আনসারী বলেন, ‘প্রচণ্ড দাবদাহ, পর্যাপ্ত পানি না থাকা ও অতিরিক্ত লবণের কারণে বেশি মাছ মারা যাচ্ছে।
সুত্র, বনিক বার্তা / কৃপ্র/এম ইসলাম