কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ দুই বছরে বদলে গেছে বিলুপ্ত ছিটমহলের মানুষের জীবনচিত্র। পঞ্চগড়ের বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দাদের ঘরে ঘরে বিদ্যুত্ পৌঁছে দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে শুরু হয়েছে রাস্তা পাকাকরণের কাজ। এছাড়া গড়ে উঠছে নতুন নতুন স্কুল-কলেজ। প্রতিটি পরিবারই বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। এ পরিবর্তনে খুশি বাংলাদেশের নতুন নাগরিকরাও।
২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে বাংলাদেশ ও ভারত ১৬২টি ছিটমহলের বিনিময় করে। ফলে ভারতীয় ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এবং ৫১টি বাংলাদেশী ছিটমহল ভারতের সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়। এতে দুই দেশেরই মানচিত্র পূর্ণতা পায়। আর ছিটমহলবাসী দীর্ঘ ৬৮ বছরের অবরুদ্ধ জীবন থেকে মুক্তি পায়।পঞ্চগড় জেলার তিনটি উপজেলায় ৩৬টি বিলুপ্ত ছিটমহলের আয়তন ১১ হাজার ৯৩২ দশমিক ৮০ একর। এর মধ্যে ১৭টিতে জনবসতি রয়েছে, যার লোকসংখ্যা ২০ হাজার ৭১ জন।
ছিটমহলবাসীদের উন্নয়নে ২৫টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। কৃষি উন্নয়নের জন্য সাইট্রাস ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় বিলুপ্ত ছিটমহলের ৩০০ কৃষক-কৃষাণীকে প্রশিক্ষণ প্রদান, চারা বিতরণ ও প্রদর্শনী খামার তৈরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য সুবিধা পৌঁছে দেয়ার জন্য বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোয় পাঁচটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের অনুমোদন হয়েছে। এর মধ্যে দেবীগঞ্জ উপজেলার বিলুপ্ত কোটভাজনি ছিটমহলে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষার উন্নয়নে পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। স্থানীয় উদ্যোগে বিভিন্ন বিলুপ্ত ছিটমহলে প্রায় অর্ধশতাধিক স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজ গড়ে উঠেছে, যেগুলোয় নিয়মিত পাঠদান করা হচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকায় প্রায় আড়াই হাজার হাস-মুরগিকে টিকাদান ও ৭০০ জন অসচ্ছল নাগরিকের মাঝে গরু, ছাগল, সোনালি মুরগি ও হাঁস বিতরণ করা হয়েছে। নয় হাজার গ্রাহককে বিদ্যুত্ সংযোগ দেয়া হয়েছে।ছিটমহল এলাকাগুলোকে ভাগ করে সংযুক্ত করা হয়েছে পার্শ্ববতী ইউনিয়ন পরিষদগুলোর সঙ্গে। সেখান থেকেই তারা ভিজিএফের চালসহ নানা সুবিধা পাচ্ছেন। মত্স্য অধিদপ্তরের আওতায় বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীদের মাছ চাষে উদ্বুদ্ধকরণ ও সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন জলাশয়ে ১ হাজার ৮০০ কেজি পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, জেলার তিনটি উপজেলায় ৩৬টি ছিটমহল বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর এ পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে এবং তা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীদের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন এসেছে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম