একজন শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৮৫ টাকা!
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বাংলাদেশ চা- উৎপাদনে ১৬২ বছরের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ ৮০ মিলিয়ন কেজি চা- উৎপাদিত হয়েছে। অথচ এই চা শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। একজন শ্রমিকের দৈনিক মজুরি মাত্র ৮৫ টাকা। ‘দেড়শ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে বংশ পরম্পরায় চা বাগানে কাজ করছেন এই শ্রমিকরা। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে তাদের ভাগ্যের কতটুকু পরিবর্তন হয়েছে তারও মূল্যায়ন প্রয়োজন। ‘এদের সন্তানদের স্কুলে পড়াশোনা করানোরও সুযোগ নেই। অনেক সময় চিকিত্সা সেবাও মেলে না’, বলেন ভাড়াউড়া চা বাগানের শ্রমিক সুমা হাজরা (৪৬)। তিনি বলেন, ‘বউ-পুলা-মাইয়া নিয়া পাঁচজনের সংসার। আগে তিন বেলা খাইতাম, এখন এক বেলা খাইলে অন্য বেলা উপাস থাকতে হয়।
’ ভুরভুড়িয়া চা বাগানের সাউথ লাইনের রমনী বিশ্বাস (৩৬) বলেন, ‘মজুরি যা পাই তিন কেজি চালের দামও হয় না। চাল হলে, ডাল কেনার সামর্থ্য নাই। কোনো রকম লবণ-টবন দিয়া মাড় ভাত খাইয়া আছি।’ একই সুরে লাখাই বাগানের ফুলমনি রিকমুন (৪১) বলেন, এই যে দেখেন দৈনিক হাজিরা যে টাকা পাই পাঁচজনের সংসার একবেলা রাতে খাই, দুইবেলা চা পানি খেয়ে কোনো রকমে বেঁচে আছি।’ শ্রমিকরা জানান, এক নিরীখ চা-পাতা আহরণ করলে (এক নিরীখ =২৩ কেজি) তাদের ৮৫ টাকা দেয়া হয়। এর পরের প্রতি কেজির জন্য ১-২ টাকা দেয়া হয়। একজন শ্রমিক ৪০-৪৫ কেজি পাতা তুলতে পারেন। তাও আবার গড়ে এক সপ্তাহ পরপর মজুরি পান তারা। পাতি তোলার মৌসুম ৬ মাস (এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর)। এই ৬ মাস পর বাগান মালিদের আরো কঠিন কাজ করতে হয়। তখন তাদের আয় একেবারেই কমে যায়।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাখন লাল কর্মকার বলেন, ‘চা-শ্রমিক জনগোষ্ঠি সীমাহীন বঞ্চনার মধ্য দিয়ে বসবাস করে আসছে। বর্তমান বাজারে এক কেজি মোটা চালের দাম যেখানে ৩৮ টাকা, সেখানে একজন চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি মাত্র ৮৫ টাকা। চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি কমপক্ষে ১৫০ টাকা নির্ধারণ, রেশন হিসাবে সপ্তাহে ৫ কেজি উন্নতমানের চাল প্রদান ও বসতভিটার স্থায়ী মালিকানা প্রদান এখন শ্রমিকদের সময়ের দাবী।’
সুত্র, বনিক বার্তা/ কৃপ্র/এম ইসলাম