কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ গতকাল ‘তামাক উন্নয়নের অন্তরায়’ শিরোনামে এক সেমিনারে জানানো হয়েছে দেশের ৬৩ শতাংশ কর্মজীবী তাদের কর্মক্ষেত্রে আর শহরবাসীর ৪৬ শতাংশ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। দেশের নারীরা কম তামাক গ্রহণ করলেও প্রায় এক কোটি নারী পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে ‘ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’ ও ‘তামাকবিরোধী জোট’। সেমিনারে বাংলাদেশ জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতির (নাটাব) সভাপতি মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু বলেন, যেসব কৃষিজমিতে তামাক চাষ হচ্ছে, পাঁচ বছর পর সেই জমিতে আর তামাক ও অন্য কোনো ফসল চাষ সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, আমরা নগদে বিশ্বাসী, নগদে কী পাচ্ছি সেটা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকি, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করি না। তামাক চাষের জন্য কৃষকদের বিভিন্ন কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রণোদনার নামে যে ‘লোভের ফাঁদে’ ফেলা হয়, তা অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানান নাটাব সভাপতি।
তিনি বলেন, তাদের লাভের বিষয়টাই শুধু বেশি করে বুঝিয়ে থাকে। আজ তামাক চাষ যে বিস্তার লাভ করছে, তা প্রতিরোধ করতে হলে একে সমূলে উত্পাটন করার নীতি নিতে হবে। ধীরে ধীরে তামাক চাষ থেকে বেরিয়ে আসার নীতিতে তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি। এই নীতিতে তামাক চাষ বিস্তার লাভ করেই যাচ্ছে। পার্বত্যাঞ্চল থেকে তা গাজীপুর, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার কথা বললেও তামাকপণ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানিতে সরকারের অংশীদারিত্ব থাকার প্রসঙ্গ টানেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য পল্টু। তিনি বলেন, ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানিতে সরকারের যে অংশীদারিত্ব রয়েছে, সেই অংশীদারিত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করার ওপর জোর দেন তিনি।
তামাকবিরোধী সংগঠন দি ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক আইনজীবী সৈয়দ মাহবুবুল আলম সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে তিনি বলেন, নিষিদ্ধ থাকলেও তামাক প্রক্রিয়াজাত করতে প্রতি বছর ২৯ লাখ ৩২ হাজার গাছ পোড়ানো হয়। পাহাড়ি এলাকার বন থেকে এসব গাছ বেশি কাটা হয়ে থাকে। এছাড়া সমুদ্রদূষণেও তামাকের ভূমিকা রয়েছে।দেশের বাজারে তামাক ও তামাকজাত পণ্য নিয়ন্ত্রণ করতে কয়েকটি প্রস্তাব রাখেন মাহবুবুল আলম। এর মধ্যে রয়েছে আসন্ন বাজেটে তামাকের ওপর উচ্চহারে করারোপ, পর্যায়ক্রমে কর বৃদ্ধির জন্য একটি করনীতি প্রণয়ন, স্বাস্থ্য উন্নয়নে সারচার্জের টাকা জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ ও চাষ নীতিমালা দ্রুত চূড়ান্ত করা।
কৃপ্র/এম ইসলাম