কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন রোধে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত হচ্ছে চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। আজ (শুক্রবার) ব্রাসেলস সম্মেলনে তাদের প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে এক যৌথ বিবৃতি দিতে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহের শুরুতে জি-সেভেন সম্মেলনে প্যারিস চুক্তি কার্যকরে জোটভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে ঐক্য জানাতে অস্বীকার করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের দূরে সরে যাওয়ার নীতির কারণে স্বাভাবিকভাবেই এ ব্যাপার আর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব থাকছে না।
ব্রাসেলসে চীন ও ইইউ নেতাদের আজকের বিবৃতি প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে এ যাবৎকালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে মনে করা হচ্ছে। বিবৃতির খসড়া হাতে পাওয়ার পর ‘বিবিসি’ জানিয়েছে, চুক্তি বাস্তবায়নে নেতারা ‘সর্বোচ্চ রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি’ দেয়ার বিষয়ে জোর দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, চীন এবং ইইউ’র এই অবস্থান আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে কিছুটা চাপের মধ্যে ফেলবে।
বৃহস্পতিবার জার্মানি সফররত চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং ঘোষণা দিয়েছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন রোধে চীন তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এটা চীনের আন্তর্জাতিক দায়িত্বের অংশ। চীন নিজের স্বার্থেই জলবায়ু পরিবর্তন রোধে লড়বে। এই ইস্যুতে অন্যান্য দেশের কাছে দৃষ্টান্ত হতে চায় চীন। প্যারিস চুক্তি কার্যকরে আমরা ভূমিকা রাখতে চাই। তবে এ জন্য অন্যান্য দেশের সহযোগিতাও প্রয়োজন।’
এদিকে, রাশিয়া জানিয়েছে, প্যারিস চুক্তি বিষয়ক প্রতিশ্রুতি পূরণে প্রস্তুত আছে মস্কো। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় একটি দেশ চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে পুরো প্রক্রিয়াটি হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছে ক্রেমলিন। অন্যদিকে, প্যারিস চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এই ইস্যু নিয়ে কার্যকরভাবে চিন্তার করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গত এক বছরের বেশি সময় ধরে চীন ও ইইউ জলবায়ু পরিবর্তন এবং ‘ক্লিন অ্যানার্জি’ নিয়ে ঐকমত্যে পেঁৗছে একটি যৌথ বিবৃতি দেয়ার জন্য কাজ করছে। এতে ‘বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু এবং সামজিক ও রাজনৈতিক ভঙ্গুরতার উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।’ খসড়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বে গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন কমাতে এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপক উন্নয়নে প্যারিস চুক্তিকে ঐতিহাসিক অর্জন হিসেবে বিবেচনা করে ইইউ ও চীন।’
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় একজোট হয়ে লড়াইয়ের জন্য ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্যারিসে এক সম্মেলনে বিশ্বের ১৯৭টি দেশের মধ্যে ১৯৫টি দেশ প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। শুধুমাত্র সিরিয়া ও নিকারাগুয়া চুক্তিটিতে স্বাক্ষর করেনি। ওই চুক্তিতে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা এবং নিয়মিত অগ্রগতি পর্যালোচনার বিষয়ে দেশগুলো নিজেরা আইন তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে প্রতিশ্রুতি পূরণে দেশগুলোর ওপর কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা প্যারিস চুক্তিতে রাখা হয়নি। ঐতিহাসিক ওই চুক্তি অনুযায়ী, বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়।
কৃপ্র/এম ইসলাম