কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ কক্সবাজারের উখিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় জনপদ রত্মাপালং ইউনিয়নের করইবনিয়া, চাকবৈঠা, মোরাপাড়া, করাচি পাহাড়, ভালুকিয়া, খেওয়াছড়ি, তুলাতলি, পূর্বকূল, আমতলী, লম্বাঘোনা ও জালিয়াপালং ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায় ঘূর্ণিঝড় মোরায় পানের বরজে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানচাষিদের আয়ের একমাত্র অবলম্বন পানের বরজ হারিয়ে দিশেহারা হাজারো কৃষক পরিবার সহজ শর্তে কৃষি ঋণ বরাদ্দের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। কৃষি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘পানের বরজ হতে কৃষকদের পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।’
কৃষি নির্ভরশীল এ উপজেলায় উৎপাদনশীল পণ্যের মধ্যে ধানের পর পান-সুপারি চাষাবাদ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছে প্রায় ২০ হাজার পরিবার। এসব পরিবার গুলো পরের জমি বর্গা নিয়ে পানের বরজ করে থাকে। এসব পানের বরজে তারা লাখ লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে আয়ের পথ সুগম করার জন্য দৈহিক পরিশ্রম করার পরও উচ্চমূল্যে পানের বরজে উপকরণ ক্রয় করে পান বাজারজাত করণে মোক্ষম সময়ে ঘূর্ণিঝড় মোরায় পানচাষিদের একমাত্র আয়ের উৎস দুমড়ে-মুচড়ে ফেলেছে।
ভালুকিয়া থিমছড়ি গ্রামের মৃত আবদুল হাকিমের ছেলে পেশাদার পানচাষি আলী আহমদ (৪৫) জানায়, সে সাড়ে চার লাখ টাকা ব্যয় করে ৩০ হাজার চারা বিশিষ্ট একটি পানের বরজ করেছিল। ঘূর্ণিঝড় মোরায় ওই পানের বরজ থেকে এক টাকার পানও বিক্রি করতে দেয়নি। সে জানায়, পরিবারের সহায়সম্বল যা ছিল তা ওই পানের বরজে বিনিয়োগ করেছে। এখন প্রশাসন যদি তাদের আর্থিক ভাবে সহযোগিতা না করে তাহলে তার পক্ষে পানের বরজ করা আর সম্ভব হবে না। একই কথা বললেন, ভালুকিয়া পূর্বকুল গ্রামের আজু মিয়ার ছেলে ছৈয়দুর রহমান।
সে জানায়, বাৎসরিক পাঁচ হাজার টাকা অগ্রিম লাগিয়ত দিয়ে সে ২০ হাজার চারার একটি পানের বরজ করেছে। শ্রমিকের মজুরি, পানের বরজের উপকরণ ক্রয়, সার ও কীটনাশক ওষুধ সহ উক্ত পানের বরজে তার প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার পুঁজি বিনিয়োগ হয়েছে। সে জানায়, আশা ছিল পানের বরজের পান বিক্রি করে এবার আনন্দের সাথে ঈদ কাটাবে। কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি পড়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোরায় তার পানের বরজ ভেঙে গিয়েছে।
সর্বস্ব হারিয়ে এ পেশাদার পান উৎপাদনকারী আলী আহমদ জানায়, সরকারিভাবে বা সহজ শর্তে তাদের ব্যাংক প্রদান করা না হলে অর্থকরী ফসল পান উৎপাদন করা তাদের পক্ষে আর সম্ভব হবে না। এভাবে শত শত কৃষক উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসে এসে পানের বরজের ক্ষতির বিবরণ দিতে দেখা গেছে। রত্নাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় এক হাজার পানের বরজ সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে। অর্থকরী ফসল পান শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এসব পানচাষিদের সহজ শর্তে ঋণপ্রদান করার জন্য তিনি জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার শরিফুল ইসলাম জানান, এ উপজেলায় সাড়ে চারশ’ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়ে থাকে। তিনি বলেন, ‘পানের বরজ হতে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতির বিবরণ দেখিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পরিপত্র প্রেরণ করা হয়েছে এবং চাষিদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের জোরালো সুপারিশ রাখা হয়েছে ওই পত্রে।’
সুত্র, ইত্তেফাক/ কৃপ্র/এম ইসলাম