কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ দিনাজপুরের কাটারিভোগ চালের সুনাম বিশ্বজোড়া, বাজারে দিনাজপুরের সুগন্ধী কাটারিভোগ চালে চাহিদা ও দাম দুটোই বেশি, কিন্তু সেই মূল্য পান না কাটারিভোগ চাষিরা। কাটারি ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না কৃষকদের। জানা গেছে, দিনাজপুরে উৎপাদিত কাটারিভোগ চালের অধিকাংশ ধান উৎপাদন হয় ফুলবাড়ী উপজেলায়। এই কারণে দিনাজপুর জেলার এই উপজেলাটি খাদ্যভা-ার বলে পরিচিত। ফুলবাড়ীসহ দিনাজপুর জেলার কাটারিভোগ ধানের বাজার ঘুরে দেখা যায় বর্তমানে বাজারে কাটারিভোগ ধান ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে চার হাজার টাকা কুইন্টাল দরে বিক্রি হচ্ছে।
চাল উৎপাদনকারী মিল মালিকদের হিসাব অনুযায়ী চালের দাম পড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা থেকে ছয় হাজার টাকা কুইন্টাল। অথচ ফুলবাড়ী বাজারেই কাটারিভোগ চাল বিক্রি হচ্ছে সাত হাজার টাকা থেকে আট হাজার টাকা কুইন্টাল দরে। চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই কাটারিভোগ চাল রাজধানী ঢাকা শহরে বিক্রি হয় ১০০ টাকা কেজি বা দশ হাজার টাকা কুইন্টাল দরে। অথচ বাজার দরের অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষদের, এই কারণে কৃষকরা কাটারিভোগ ধান চাষ করে কোনো প্রকার লাভের মুখ দেখতে না পেলেও, কাটারিভোগ চালের ব্যবসা করে দু’হাতে টাকা রোজগার করছে মধ্যস্বত্ব ভোগীরা।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এটিএম হামিম আশরাফ বলেন, এই উপজেলায় গোল্ডেন কাটারিভোগ, সোনা কাটারিভোগ, জিরা কাটারিভোগ ধান চাষ হয়। এই বোরো মৌসুমে মোট ধান চাষ হয়েছে সাড়ে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে। যার মধ্যে কাটারিভোগ ধান চাষ হয়েছে ৯ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে। গোল্ডেন কাটারিভোগ চাষ হয়েছে ১২০০ হেক্টর, সোনা কাটারিভোগ ১০৪০ হেক্টর, মিনিকেট ৩৫৮০ হেক্টর ও জিরা কাটারিভোগ চাষ হয়েছে ৩০০০ হেক্টর জমিতে। কৃষি কর্মকর্তা হামিম আশরাফ বলেন, শুধু বোরো মৌসুমে এই উপজেলায় ধান উৎপাদন হয়েছে ৪৪ হাজার ৫৭৪ মেট্রিক টন। এর মধ্যে কাটারিভোগ উৎপাদন হয়েছে ২৯ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন।
আমন মৌসুমে ধান চাষ হয় ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে এর মধ্যে কাটারিভোগ ধান চাষ হয় দশ হাজার হেক্টর জমিতে, আমন মৌসুমে মোট ধান উৎপাদন হয় ৭৭ হাজার ৬৭০ মেট্রিক টন যার মধ্যে কাটারিভোগ ধান চাষ হয় ৫১ হাজার ৭৮০ মেট্রিক টন। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী এই উপজেলায় আমন ও বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদন হয়, ১ লাখ ৬৫ হাজার ৯৩০ মেট্রিক টন, তার মধ্যে এই উপজেলার খাদ্য চাহিদা আছে মাত্র সাড়ে ৪৪ হাজার মেট্রিক টন। বাকি ধান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
উপজেলার সর্ববৃহৎ অটোরাইস মিল লাভলী ফুট ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক অধ্যক্ষ খুরশিদ আলম মতি ও মির্জা অটোমিলের ম্যানেজার মশিউর রহমান বলেন, চালের উৎপাদন খরচ মিলের ঋণের সুদ, পরিবহন খরচ মিলে কৃষকদের কিাছে যে দরে ধান কেনা হয় তার দ্বিগুণ দামে চাল বাজারে বিক্রি করতে হয়। এদিকে কৃষকরা বলছেন, সরকার সরাসরি কাটারিভোগ ধান কৃষকদের কাছে ক্রয় করে বাজারজাত করলে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাবেন।
সুত্র, বনিক বার্তা/ কৃপ্র/এম ইসলাম