কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ পাহাড় ধসের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় উৎপাদিত ফসল বিক্রি না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পাহাড়ের কৃষকরা। জানা গেছে, রাঙ্গামাটিসহ পার্বত্য জেলাগুলোয় এখন ফল ফসল উত্তোলনের মৌসুম চলছে। এমনিতে এ সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ী ও বেপারিরা রাঙ্গামাটি থেকে কৃষিপণ্য সংগ্রহ করেন। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এবার কৃষিপণ্যের ক্রেতা নেই। চট্টগ্রামে পৌঁছানোর সুযোগ না থাকায় স্থানীয় বেপারিরাও এসব পণ্য কিনছেন না। এ কারণে আদিবাসী কৃষকরা ফলসহ বিভিন্ন কৃষিজ পণ্য বাজারে এনেও ক্রেতা না থাকায় আবার ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন। অবিক্রীত পণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনেকে সেগুলো যেখানে সেখানে ফেলে দিয়ে যাচ্ছেন।
রাঙ্গামাটির রিজার্ভ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, রাঙ্গামাটিতে এখন খাদ্যপণ্যই প্রধান পণ্য। কৃষিজ পণ্যের শহর রাঙ্গামাটিতে এখন মৌসুমি ফল ও সবজির পাইকারি ক্রেতা নেই। এতে আদিবাসী ও স্থানীয় কৃষকদের উত্পাদিত পণ্যগুলো বিক্রি হচ্ছে না। আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফলমূল বাজারে আনলেও অবিক্রীত থাকছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক না হলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রাঙ্গামাটির সঙ্গে চট্টগ্রামের মূল সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কাপ্তাই উপজেলা হয়ে নৌপথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করেছে প্রশাসন। প্রতিদিন দুটি করে ট্রলার উভয় দিক থেকে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত রয়েছে। তবে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের একটি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পর থেকে কাপ্তাই হয়ে যোগাযোগও কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
পরিস্থিতি উত্তরণে রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা প্রশাসক স্থানীয় বাজার সমিতির নেতা, ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য পেশাজীবীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সভায় জানানো হয়, পাহাড় ধসের পর কেউ কেউ খাদ্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু বর্তমানে রাঙ্গামাটিতে খাদ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে।
বৈঠকে জেলা প্রশাসক বলেন, কাপ্তাই দিয়ে পণ্য আনা-নেয়ার জন্য প্রয়োজনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে লঞ্চ পরিবহন সুবিধা দেয়া হবে। এতে কম খরচে পণ্য আনা যাবে। কোনো অবস্থায় অতিরিক্ত মূল্য বরদাশত করা হবে না। রাঙ্গামাটিতে ত্রাণ বিতরণের জন্য ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি সেনাবাহিনী, তিনটি রেড ক্রিসেন্ট ও চারটি আশ্রয়কেন্দ্র বিজিবি ও পুলিশ পরিচালনা করবে। আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনার বিষয়টি জেলা প্রশাসন সমন্বয় করবে বলে তিনি জানান।
জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী মানুষ এবং পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে প্রশাসন তত্পর রয়েছে। আগামী তিনদিনের মধ্যে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক হালকা যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা হবে। তবে পুনরায় পাহাড় ধসের আশঙ্কায় এখনো কয়েক হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। আশা করি, সরকারি সহযোগিতায় এ বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। বর্তমান সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
কৃপ্র/এম ইসলাম