কৃষি প্রতিক্ষণ রিপোর্ট ।।
বাংলায় নাম – শাঠি। বৈজ্ঞানিক নাম Curcuma zedoaria এটি Zingiberaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ।শটির কন্দ সুগন্ধযুক্ত। অযত্ন আর অবহেলায় গ্রাম-বাংলার পথে প্রান্তরে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা শটি এখন বিলুপ্তপ্রায়। এটি বর্ষজীবী গুল্ম ও কন্দ জাতীয় উদ্ভিদ। অঞ্চলভেদে শটি বনহলুদ, জংলি হলুদ, হুইড ইত্যাদি নামে পরিচিত। শঠী গাছ অনেকটা হুলুদ গাছের মত কন্দ জাতীয় এবং পাতা হলুদ পাতার মত ২ ফুট পর্যন্ত লম্বা। পুষ্পদন্ড ১ ফুট লম্বা এবং মাথার চারিদিকে ২ থেকে ৩ বর্ণের মিশ্রিত ফুল হয়। কন্দ গোলাকার, লম্বাটে এবং বাঁকা বাঁকা, অনেকটা আদার মত চারিদিকে মুখী বের হয়। এপ্রিলে-মে মাসে ফুল ও পরে ফল হয়। এর পাতা প্রায় ৪০ সে.মি. লম্বা, বৃন্তদেশ সরু। পুষ্পদন্ড ১৫ সে.মি. বা ততোধিক লম্বা হতে পারে। ফুল পীত, শ্বেত ও বেগুনী রুংয়ের মিশ্রন হয়ে থাকে। বীজকোষ ডিম্বাকৃতি ও মসৃণ। বীজ লম্বাকৃতি শ্বেতবর্ণ। মে মাসে ফুল ও পরে ফল হয়।
একসময় আমাদের দেশে পেটে পীড়ার রোগীদের শটির গুড়ো রান্না করে বার্লির মতো করে খাওয়ানো হতো। তাছাড়া দুধ-চিনি দিয়ে চমত্কার পায়েশও করা যায়। শটি বিভিন্ন রোগের মহৌষধ হিসেবেও ব্যাবহার হত। তবে এখন আর শটির বহুমাত্রিক ব্যবহার নেই।
প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এ শাঠি বাংলাদেশের বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার শালবনে প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। পাহাড়ী বনাঞ্চলেও জন্মায় শটি। বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলেও জন্মায় শটি। এক কথায় দেশের সব অঞ্চলেই এক সময় এ শটি দেখা যেত। বিভিন্ন রোগের মহৌষধ এ শটির বহুমাত্রিক ব্যবহার বিষয়ে জনসচেতনার অভাব,শটি প্রক্রিয়াজাতকরণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাবহার না থাকায় মহৌষধ শাঠি এখন বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। শটি সারা দেশে কম-বেশি চোখে পড়লেও পুরনো ও লালমাটি অঞ্চলে তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায়। শটি ফুল মুগ্ধ হওয়ার মতো সুশ্রী। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে খোলা জায়গায় যেখানে শুধু মোটা ঘাস ছাড়া কিছুই নেই, সেখানে হলদে মাথা ছোট্ট ডাটির ওপর শটি ফুল দুর্লভ সৌন্দর্য ছড়ায়।
বৈশাখে নতুন পাতা গজাবার আগে এ ফুল দেখা দেয়, আবার কিছু পাতা বের হওয়ার পরও দেখা যায়। পাতা ২ থেকে ৩ ফিট লম্বা দেখতে অনেকটা হলুদ গাছের পাতার মতো। গোড়ার মূল বা কন্দটি দেখতে হলুদের মতো। এর নামই শটি। বিশেষ পদ্ধতিতে এর নির্যাসটুকু চটকে নিলে ময়দার মতো একটি দ্রব্য পাওয়া যায়। একসময় এর থেকে আবির হতো। তখন আবির তৈরি প্রায় কুটির শিল্পের পর্যায়ে ছিল।
কৃপ্র/এম ইসলাম