লাভবান হবে গোটা বিশ্ব!
কৃষি প্রতিক্ষন ডেস্ক : কুড়িগ্রামে পরিবেশবান্ধব পরিবেশে কম খরচে অধিক ধান উৎপাদন করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন মমিনুল ইসলাম নামে এক কৃষিবিজ্ঞানী। কোনরকম সার ও কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই তার এ উদ্ভাবন পদ্ধতি দেশে ও বিদেশে যথেষ্ট আলোচিত হয়েছে। সম্প্রতি তার এ পদ্ধতিটির উপর ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ান একাডেমি অব বিজনেস লিডারশিপ কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে ১১টি দেশের প্রতিনিধিদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান জার্নালে সেটি প্রকাশিত হয়েছে। সারাদেশের কৃষক যখন অধিক কীটনাশক ও সারের অপ-ব্যবহারের ফলে জমির ভবিষ্যৎ উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন; তখন মমিনুলের ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে ধান চাষ ব্যাপক সাঁড়া ফেলে দিয়েছে। খবর বাসসের ।
জেলার উলিপুর সদর উপজেলার ডারারপাড় গ্রামের কৃষিবিদ মমিনুল ইসলাম, ইসলামিক গবেষণার মাধ্যমে সার ও কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার না করেই পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে কম খরচে ধান উৎপাদন করে এই সাফল্য দেখান। তার এ সাফল্য তাক লাগিয়ে দিয়েছে আশপাশের কৃষককে। চলতি বছর তার উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে ২৮ জাতের ধান বপন করে ১ শতক জমিতে ১ মণেরও বেশি উৎপাদন হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে মাত্র ১২০ টাকা। পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকরা একই পরিমাণ জমিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে একই জাতের ১ মণ ধান উৎপাদন করতে ব্যয় করেছে প্রায় ৫ থেকে ৬শ’ টাকা। এবার ৬৪ শতক জমিতে মমিনুল ধান চাষ করেছেন। এক হিসেবে দেখা যায়, ১ একর জমিতে অন্যান্য কৃষকের খরচ লাগে ৩০ হাজার টাকা। সেখানে মমিনুল ইসলামের পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতিতে চাষ করলে ব্যয় হবে মাত্র ১২ হাজার টাকা।
পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ধান চাষের সহজ উপায় হল, বীজ সংরক্ষণের জন্য প্রথমে শীষসহ ধান বেঁধে সংরক্ষণ করা। এরপর জৈব পদ্ধতিতে বীজতলা প্রস্তুত করা। এজন্য গত বছরের নাড়া চাষের মাধ্যমে ফসফরাস হিসেবে ব্যবহার করা। ধনচা বিচি ছিটিয়ে দেয়া। গরুর গোবর/মুত্র, ইউরিয়া হিসেবে ব্যবহার করা। এছাড়াও বাড়ীর উঠোনের একদিকে গর্ত করে বাড়ির জৈব বর্জ্যগুলো যেমন- সবজি, ডিমের খোসা, খাবারের উচ্ছিষ্ট হাঁস-মুরগির বিষ্ঠাকে সার হিসেবে সংরক্ষণ করে পরে বীজতলায় ব্যবহার করা। বীজতলা তৈরির জন্য অঙ্কুরিত বীজ পাতলা করে ছিটিয়ে দেয়া। এরপর জমিতে মাত্র একটি করে চারা রোপণ করা। এতে একদিকে যেমন চারার অপচয় রোধ হয়, অপরদিকে চারা গাছ হয় পুষ্ট। এছাড়াও ১টি চারা জমি থেকে যথেষ্ট পরিমাণ খাবার সংগ্রহ করতে পারে। এতে লম্বা ও পুষ্ট দানাদার শীষ হয়। শীষে বেশি পরিমাণ ধান হয়। এভাবে চারা লাগালে জমিতে কী পরিমাণ চারা লাগবে, তার সঠিক তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়। এ পদ্ধতিতে চারাগাছের যত্ন নিলে সহজেই তা আবহাওয়া-উপযোগী পরিবেশে বেড়ে ওঠে।
গত তিন বছর গবেষণা করে দেখা গেছে, জমিতে একটি করে চারা রোপণ করে চারাগাছে ৭ থেকে সর্বোচ্চ ৩৭টি ধান গাছের জন্ম হয়েছে। এ বছর পরীক্ষামূলকভাবে ডারারপাড় গ্রামে ৪টি প্লটে ৬৪ শতক জমিতে একটি করে চারাগাছ রোপণ করে দেখা গেছে, প্রতিটি চারাগাছ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫টি ও সর্বনিম্ন ৭টি শীষের জন্ম হয়েছে। এসব শীষ ছিল গড়ে ১০ইঞ্চি লম্বা এবং শীষে ২০০টির মতো দানা পাওয়া গেছে। সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করে ওই জমি থেকে সংগ্রহ করা ১০০টি শীষ থেকে ধান বের করে ওজন করে পাওয়া গেছে ৩৪৬ গ্রাম। অপরদিকে সার,পানি ও কীটনাশক ব্যবহার করা পাশের জমি থেকে সংগ্রহ করা একই জাতের ২৮ ধানের ১০০টি শীষ থেকে সংগ্রহ করা ধানের ওজন পাওয়া গেছে মাত্র ১৯৩ গ্রাম। তুলনামূলকভাবে দেখা যায়, তার ১ শতক জমিতে মাত্র ১২০ টাকা ব্যয়ে ২৮ জাতের ধান উৎপাদন হয়েছে ১ মণেরও বেশি।
মমিনুল ইসলাম জানান, পবিত্র কুরআন মজিদ-এর ৩টি আয়াতে বীজ উৎপাদন বিষয়ক ধারণা থেকে তিনি উদ্বুদ্ধ হয়ে এই গবেষণা শুরু করেন। তিনি এই গবেষণার নাম দিয়েছেন ‘আল-কোরআন’ এর আলোকে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ধান চাষ। তার এই পদ্ধতিতে ধান উৎপাদনে এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
সম্প্রতি কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মকবুল হোসেন বিষয়টি স্বীকার করে জানান,পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য এটি একটি ভাল উদ্যোগ। এতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করেই অধিক ফসল উৎপাদন হচ্ছে। এর মাধ্যমে কৃষক সমাজকেও উদ্বুদ্ধ করা যাচ্ছে।