কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৯তম জন্মবার্ষিকী। বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে কবি কাজী নজরুল ইসলাম জন্মেছিলেন। তাঁর ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন।
বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তাঁর কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।
কাজী নজরুল ইসলাম অবহেলার শিকার মানুষদের জন্য তিনি লিখেছেন। তাদের মর্যাদার জন্য সোচ্চার হয়েছেন। সমাজে যে রক্ষণশীলতা, প্রাতিষ্ঠানিক নানা বিধি-নিষেধ, কুসংস্কার ও গোঁড়ামি এসবের হাত থেকে সমাজকে রক্ষার জন্য নিরলস কাজ করে গেছেন। কৃষক, মুটে, মজুর, কামার-কুমার সকলের অধিকার আদায়ের জন্য তিনি অসংখ্য কবিতা, গান, নিবন্ধসহ নানা বৈচিত্র্যের লেখার মধ্য দিয়ে জাগ্রত তা করেছেন।
কাজী নজরুল ইসলাম অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন। তাঁর পরিবারসহ আত্মীয়-পরিজনের অধিকাংশই ছিলেন কৃষিজীবী। গ্রামের সেই কুসংস্কারে আবর্তিত জীবনধারায় তাঁকে নানা বৈচিত্র্যে বেড়ে উঠতে হয়েছে। কৃষক সমাজকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য গভীর আন্তরিকতা ছিল নজরুল ইসলামের। তিনি তাঁর জীবনবন্দনা কবিতা কৃষকদের কল্যাণে এবং তাদের উৎসাহিত করার মানসে সন্ধ্যা কাব্যগ্রন্থ ‘জীবন বন্দনা’ কবিতায় উল্লেখ করেছেন, ‘গাহি তাহাদের গান, ধরণীর হাতে দিলো যারা আনি, ফসলের ফরমান। শ্রমকিনাঙ্ক কঠিন যাদের, নির্দয় মুঠি তলে, ত্রস্তা ধরণী নজরানা দেয়, ডালি ভরে ফুলে ফলে।’ এ কবিতার চরণ থেকে প্রতীয়মান হয় তাঁর মাঝে ছিল অগাধ কৃষি ভাবনা। সেইসাথে এ কবিতার মাধ্যমে তিনি কৃষক সমাজের সম্মান ও মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন।
১৯২৫ সালের ১৬ই ডিসেম্বর নজরুলের পরিচালনায় বের হয়ে ‘লাঙল’ পত্রিকা। নজরুলের সমাজতান্ত্রিক চিন্তাভাবনার ধারক, বাহক ও মুখপাত্র ছিল লাঙল। পত্রিকাটির লোগো ছিল লাঙল কাঁধে কৃষাণের ছবি। প্রথম দিকে এর স্লোগান ছিল শ্রমিক প্রজা স্বরাজ সম্প্রদায়ের মুখপত্র। পরবর্তীতে এর স্লোগান পরিবর্তিত হয়ে ‘বঙ্গীয় কৃষক ও শ্রমিক দলের সাপ্তাহিক মুখপত্র’ হিসেবে গণ্য হয়। একই সঙ্গে লাঙলে’র লোগোও পরিবর্তিত হয়। এই পরিবর্তনের পেছনে একটি কারণ বোধহয় পত্রিকার রেজিস্ট্রেশন। রেজিস্ট্রেশনভুক্ত হওয়ার আগের লোগো ও স্লোগানের সাথে রেজিস্ট্রেশন-পরবর্তী লোগো ও স্লোগানের পার্থক্য লক্ষ করা যায়।
ফেব্রুয়ারি ১৯২৬ সাল থেকে রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ লাঙল প্রকাশ হতে থাকে। প্রথম পাতায় ব্যানারের ওপর বাঁদিকে রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি লেখা থাকতো। লাঙল পত্রিকাটি নজরুল মূলত তাঁর দলের মুখপত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। এ পত্রিকায় প্রকাশিত নজরুলের কবিতা ও প্রবন্ধ এবং অন্যদের লেখা, প্রবন্ধ ও কবিতাগুলো ছিল মূলত সমাজতান্ত্রিক চিন্তা ও ধ্যান-ধারণার প্রতীক। প্রতিটি সংখ্যায় নজরুলের একটি কবিতা প্রকাশ পেতো।
প্রথম সংখ্যায় প্রকাশ পায় নজরুলের বিখ্যাত ‘সাম্যবাদী’ কবিতাটি। ২য় সংখ্যায় ‘কৃষাণের গান’ এবং তৃতীয় সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল ‘সব্যসাচী’ কবিতাটি। আরেকটি বিখ্যাত কবিতা ‘সর্ব্বহারা’ প্রকাশ পায় লাঙলের চতুর্দশ সংখ্যায়। এ সকল কবিতায় নজরুলের সাম্যবাদী চিন্তাধারার প্রকাশ পেয়েছে।
নজরুল ইসলামের মাঝে কৃষকের প্রতি গভীর মমতা ও ভালোবাসা ছিল। কৃষক সমাজের কল্যাণে ও উন্নয়নে কৃষকের গান লিখে কৃষিভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা অগ্রগামী করে কৃষক সমাজের কল্যাণে তাঁর লিখনী বিস্তৃত হয়েছে।
কৃপ্র/এম ইসলাম