কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
এ বছর নওগাঁ জেলার সাপাহারে আমের দাম তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় হতাশ এ অঞ্চলের আম চাষিরা। গত বছর আম চাষ করে লাভের মুখ দেখলেও এ বছর লোকসান গুনতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। আর এর কারণ হিসেবে উপজেলা প্রশাসনের আম পাড়া ও বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞাকে তারা দায়ী করছেন। এভাবে চলতে থাকলে আগামীবার অনেক চাষি আম চাষ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় আবহাওয়া অনেকটা অনুকূলে থাকায় এ বছর প্রচুর পরিমাণ গাছে মুকুল আসে। সেই সঙ্গে প্রাকৃতিকভাবে গাছের পরিচর্যা করায় গাছে আশানুরূপ আমের ফলন হয়। তবে গত মৌসুমের মতো আম চাষে ফরমালিনের ব্যবহার ঠেকাতে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক কঠোর অবস্থানের ফলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত্ম হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
এ বছর তীব্র তাপদাহ ও গরম আবহাওয়ার কারণে সময়ের আগে গাছেই আম পাকতে শুরু করে। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন থেকে আম চাষিদের ১ জুনের আগে এ উপজেলায় আম গাছ থেকে আম পাড়া ও বাজারজাতকরণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ফলে প্রশাসন কর্তৃক জারি করা সময়ের আগেই গাছে গাছে আম পাকতে শুরু করে।
আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্ত্মির ঘোষণার ফলে এ বছর গাছেই আম পেকে ঝরে পড়ে যায়। আর ১ জুনের পর সব আম চাষি একসঙ্গে গাছ থেকে আম নামিয়ে বাজারজাত করতে গিয়ে প্রচুর আমদানির কারণে বাজারে আমের দাম নেমে যায়। ফলে আম চাষি ও বিক্রেতাদের লাভের জায়গায় ক্ষতির মুখ দেখতে হচ্ছে।
সাপাহার উপজেলার এক আম চাষি জানান, এবারের গরমে তাপমাত্রা বেশি থাকায় সব ধরনের আম সময়ের আগেই পেকে গেছে। কিন্তু, বাজারে বিক্রি নিষিদ্ধ থাকার কারণে তা বাজারে তোলা যায়নি। এ কারণে অনেক আম পেকে নষ্ট হয়ে গেছে। আর একসঙ্গে সব আম চাষি বাজারে আম তোলায় দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে।
আম বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর হিমসাগর আম মণপ্রতি বিক্রি হয়েছে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা করে। যা এ বছর বিক্রি হচ্ছে ১০০০ হাজার থেকে ১২০০ টাকায়। গোপালভোগ গত বছর ১০০০ থেকে ১৬০০ টাকা, এ বছর ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ল্যাংড়া গত বছর ২০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা, এ বছর ১০০০ থেকে ১৩০০ পর্যন্ত্ম। গুটি গত বছর ৫০০ থেকে ১৩০০, এবারে ৪০০ থেকে ৬০০ পর্যন্ত্ম।
এ বছর স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেমিক্যাল দিয়ে ফল পাকানো রোধে ‘উপজেলা পর্যবেক্ষণ কমিটি’ গঠন করা হয়। আর এ বছর যেন আমচাষিরা ফরমালিন মিশাতে না পারেন সে কারণেই ১ জুন পর্যন্ত্ম আমপাড়া ও বাজারে বিক্রি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত্ম নিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন।
এ ব্যাপারে সাপাহার উপজেলা কৃষি অফিসার এএফএম গোলাম ফারম্নক হোসেন বলেন, ‘এখানে তুলনামূলকভাবে আমের দাম অনেক কম। বাজারজাতের সমস্যার কারণে ভালো ফলন হলেও দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। তাছাড়া রমযান মাস হওয়ায় এ বছর ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাইকারি না আসায় আমের দাম কম পাচ্ছেন চাষিরা। তবে রমযান মাসের পর আমের দাম বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি। তিনি আরও জানান, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে চাষিদের আম চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে এবং মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তারাও সবসময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
বিষয়গুলো নিয়ে সাপাহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার কল্যাণ চৌধুরী জানান, ফরমালিনবিহীন আম জনগণকে খাওয়ানোর জন্য উপজেলা প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত্ম নিয়েছিল। এ বছর তা কোনো ব্যবসায়ী করতে পারেনি। ফরমালিনবিহীন আম জনগণকে খাওয়ানোর জন্য এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
তথ্যসুত্র, যায়যায় দিন / কৃপ্র/এম ইসলাম