কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
ভয়াবহ দূষণের কবলে পরেছে হালদা নদী। হালদার পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় মরে যাচ্ছে মাছ। সাধারণত প্রতি লিটার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের স্বাভাবিক মাত্রা থাকে ৫ মিলিগ্রাম। কিন্তু হালদার পানিতে পাওয়া গেছে ২ মিলিগ্রামের চেয়েও কম। এত কম পরিমাণ অক্সিজেনের মধ্যে মাছ বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ টিম নদীর ১০টি পয়েন্টে পানির নমুনা পরীক্ষা করে পানির ভয়াবহ এ চিত্র পেয়েছে।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, ‘গত দুই যুগের বেশি সময় ধরে হালদায় কাজ করছি। কিন্তু হালদার পানি এত ভয়াবহ দূষণ হতে দেখিনি।
বৃহস্পতিবার নদীর কর্ণফুলীর মুখ, খন্দকিয়া খালের মুখ, কাটাখালী খালের মুখ, মাদারিখালের মুখ, রামদাশ হাট এলাকা, নাপিতের ঘোনা, আজিমের ঘাট, মাছুয়াঘোনা, সর্তারঘাট এলাকাসহ ১০টি পয়েন্টে পানির নমুনা পরীক্ষা করি। পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন খুব কম পাওয়া গেছে যা মাছের বসবাসের উপযোগী নয়। নমুনা পরীক্ষায় নদীর উজানের চেয়ে ভাটি এলাকায় দূষণের মাত্রা বেশি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রাউজানের আজিমের ঘাট থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকায় দূষণের মাত্রা তুলনামূলক বেশি ছিল। ’
প্রফেসর মো. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, ‘সাধারণত প্রতি লিটার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের স্বাভাবিক মাত্রা থাকে ৫ মিলিগ্রাম। কিন্তু হালদার পানিতে রয়েছে ২ মিলিগ্রামের চেয়েও কম। এত কম পরিমাণ অক্সিজেনের মধ্যে মাছ বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তাই রুই জাতীয় মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে ভেসে উঠছে। পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে নদীতে।
স্থানীয়রা জানান, গত মঙ্গল ও বুধবার হালদায় ছোট ছোট মাছ মারা পড়লেও গতকাল বৃহস্পতিবার পাওয়া গেছে প্রচুর বড় বড় মৃত মাছ। এর মধ্যে রুই জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) মাছও রয়েছে। রুই জাতীয় মাছের মধ্যে ১৫ কেজি ওজনের একটি মৃগেল মাছও পাওয়া গেছে। পরে এটি মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে।
দূষণে বিপর্যস্ত হালদা নদীতে মরে ভেসে উঠেছিল মা–মাছটি। এতটাই পচে গেছে মাছটি শেষ পর্যন্ত মাটি খুঁড়ে চাপা দেওয়া হলো কঙ্কাল সংগ্রহের জন্য। মৃগেল ছাড়াও বড় বড় কাতলা, আইড়, চিংড়ি, বাইন, টেংরাসহ নানা প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠছে হালদায়। হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য। উদ্বেগ–উৎকণ্ঠায় রয়েছেন হালদাপারের মানুষ।
প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিনে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে রাউজান, ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীতে বন্যা দেখা দেয়। বন্যার পানি নামার পর কয়েকদিন ধরে হালদার মাছ মরে ভেসে ওঠার বিষয়টি নজরে পড়ে মানুষের। নদীর পানি কালো রং ধারণ এবং দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। মঙ্গল ও বুধবার নদীতে ছোট আকারের মরা মাছ দেখা গেলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রচুর পরিমাণের রুই জাতীয়সহ বিভিন্ন প্রজাতির বড় মাছ ও জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠতে দেখা যায়। নদী দূষণ ও মাছ মরে যাওয়ার কারণ নির্ণয়ের জন্য গতকাল মাঠে নামে বিশেষজ্ঞ টিম। তাদের পরীক্ষায় নদীর পানি দূষণের এই ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে।
সুত্র, দৈনিক পূর্বকোন / কৃপ্র/এম ইসলাম