কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
সম্প্রতিক সময়ের টানা বৃষ্টিপাত ও বন্যায় মৌলভীবাজারে চার উপজেলায় আমনের বীজতলা ও আউশ ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একদিকে বাড়িঘর, অন্যদিকে ফসলের ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় দিকভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগ বলছে, মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন করে আউশের চারা লাগানো সম্ভব হবে না। তাছাড়া বীজতলা নষ্ট হওয়ায় চারাও পাওয়া যাবে না। কৃষকদের এখন আমন চাষে মনোযোগ দেয়া দরকার।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪৯ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়। সাম্প্রতিক বন্যায় জেলার চার উপজেলার ৩ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমির আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কুলাউড়ায় ১ হাজার ৪৬০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ১৯৫ হেক্টর, রাজনগরে ৯০৫ হেক্টর ও কমলগঞ্জে ৮০০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর সারা জেলায় ১৬০ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন সবজি ক্ষেত বন্যার পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে।
তবে স্থানীয় কৃষক ও জনপ্রতিনিধিদের দাবি, কৃষি বিভাগের এ হিসাবে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ উঠে আসেনি। এটি বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। প্রকৃতপক্ষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি।
কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের চাষী মনোরঞ্জন মালাকার বলেন, চার বিঘা জমিতে আউশ লাগিয়েছিলাম। বন্যার পানিতে তলিয়ে সব নষ্ট হয়ে গেছে। এ ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না।
কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষারের কৃষক আলতাফ মিয়া জানান, ঋণ করে আট বিঘা আউশ ধান চাষ করেছিলাম। কিন্তু সম্পূর্ণটাই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমনের চাষাবাদ করার মতো অর্থ নেই।
রাজনগর উপজেলার মনসুরগর ইউনিয়নের কদমহাটা এলাকার কৃষক শাহীন আহমদ বলেন, ১২ বিঘার আউশ ক্ষেতের সবটুকু পানিতে ভেসে গেছে। ঢলের পানি ঘর ভেঙে মালামাল নিয়ে গেছে। আউশ তো হারালাম। আমনের যে বীজ ছিল তাও ঘরের মালামালের সঙ্গে পানি ভাসিয়ে নিয়েছে। ঘর মেরামতের টাকা নেই, ধান চাষ করব কীভাবে?
কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিদ বাচ্চু বলেন, আমার ইউনিয়নের ৯৫ ভাগ মানুষ কৃষিজীবী। এ বছর আমার ইউনিয়নে ১৫ হাজার একর জমিতে আউশ ধানের চাষাবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে টিকে আছে মাত্র তিন হাজার একর। বাকি ১২ হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউপির চেয়ারম্যান তৌফিক আহমেদ বাবু বলেন, আমার ইউনিয়নেরই অন্তত এক হাজার হেক্টর আউশ ধান নষ্ট হয়েছে।
কৃষক ও জনপ্রতিনিধিদের দেয়া ক্ষয়ক্ষতির তথ্যের ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা যে তালিকা দিয়েছি তা শুধু সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত জমির। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। সেটি করতে আরো সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, আমরা আশাবাদী সম্পূর্ণ পানি কমে যাবে গেলে তলিয়ে যাওয়া ফসল কিছুটা রক্ষা পাবে। তবে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাতে লক্ষ্যমাত্রায় খুব ব্যাঘাত হবে না। আর সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পেতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে।
তথ্যসুত্র, দৈনিক বনিক বার্তা / কৃপ্র/এম ইসলাম