কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগের তথ্যানুযায়ী, আগামী দুই থেকে তিন দিন উজানে ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে, এতে করে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে সিলেট অঞ্চলে সুরমা, কুশিয়ারা, সোমেশ্বরীসহ কয়েকটি নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। খবর বাংলাদেশ প্রতিদিন অনলাইনের।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, সিলেটের কানাইঘাটে সুরমার পানি ২৪ ঘণ্টায় ৪৬ সেন্টিমিটার বেড়ে গতকাল সকাল ৯টায় বিপদসীমার ১০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ নদীর পানি সিলেট সদরে বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার এবং সুনামগঞ্জে ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল। এ সময় নেত্রকোনার কলমাকান্দায় সোমেশ্বরীর পানি বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, চট্টগ্রামের দোহাজারিতে সাঙ্গুর পানি ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এছাড়া সিলেটের সারিঘাটে সারিগোয়াইন নদী, সিলেট ও শেরপুরে কুশিয়ারার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জাদুকাটা নদী লরেরগড় পয়েন্টে বিপদসীমা স্পর্শ করেছিল। মৌসুমী বায়ু দেশজুড়ে সক্রিয় থাকায় মধ্য আষাঢ়ের পর মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উত্তরে ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ঘাঘট আর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সুরমা ও কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি আগামী দুই দিনে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।
তবে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধির ধারা কমে আসতে পারে। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির ধারা আরও তিন দিন এবং পদ্মায় আরও দুদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- শরণখোলা (বাগেরহাট) : শরণখোলার সাউথখালীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের প্রায় দেড় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
জোয়ারের পানি ৮টি গ্রামে প্রবেশ করে আমনের বীজতলা, মাছের ঘের ও ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার রাতে আকষ্মিকভাবে বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে যাওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে এখন চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বলেশ্বর নদী সংলগ্ন বগী থেকে গাবতলা আশার আলো মসজিদ পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার পাউবোর বাঁধ সম্পূর্ণভাবে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
জোয়ারের পানি এখন ওই ইউনিয়নের ৮টি গ্রামে উঠানামা করছে। ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাাত্রা ব্যাহত, আমনের বীজতলা ও মাছের ঘেরসহ ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। লালমনিরহাট : অবিরাম বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটে তিস্তা-ধরলাসহ ১২টি নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম আঙ্গরপোতা, চরদহগ্রাম, হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সির্ন্দুনা, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার-পশ্চিম কাশিরাম, চর বৈরাতী, নোহালী, শৈলমারী, ভোটমারী, হাজিরহাট, আমিনগঞ্জ, কাঞ্চনশ্বরও রুদ্ধেশ্বর, আদিতমারী উপজেলার-চণ্ডিমারী, দক্ষিণ বালাপাড়া, আরাজি শালপাড়া, চরগোর্দ্ধন ও সদর উপজেলার- কালমাটি, খুনিয়াগাছা, রাজপুর, তিস্তা, তাজপুর, গোকুণ্ডা, মোগলহাট, বনগ্রামসহ নদীর তীরবর্তী প্রায় ২৫ গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। নদী তীরবর্তী এলাকার পানিবন্দি মানুষজন পরিবার-পরিজন এবং গৃহপালিত পশু নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
এদিকে লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি গতকাল সকাল থেকে আবারো বিপদসীমার খুব কাছ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সকালে তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকীেশলী রফিকুল ইসলাম।
নীলফামারী : বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও পানি বাড়ায় আতঙ্কে পড়েছেন তিস্তা পাড়ের মানুষ। উজানের ঢলে তিস্তা নদীতে পানি বাড়তে থাকায় ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ১০ ইউনিয়নের মানুষরা পড়েছেন আগাম বন্যার কবলে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া বিভাগ সূত্র জানায়, তিস্তা নদীতে পানি বাড়ছে ভারতের থেকে ধেয়ে আসা ঢলের কারণে। ব্যারেজের সবকটি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে পানি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য।
পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান জানান, পানি বাড়ার ফলে তিস্তা নদী বেষ্টিত পূর্ব ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, গোলমুণ্ডা, শৌলমারী, খগাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানী, গয়াবাড়ি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। কক্সবাজার : টানা দুদিনের ভারী বর্ষণে উখিয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের তৈরিকৃত ৫ শতাধিক ঝুপড়ি ঘর ধসে পড়েছে।
এসব পরিবারগুলোকে এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিনযাপন করতে হচ্ছে। এদিকে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে উখিয়ার বালুখালী কাস্টমস, থাইংখালী, পালংখালীসহ বিভিন্ন স্থানে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সহস্রাধিক পরিবার।
পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, মঙ্গলবার ও গতকাল প্রবল বর্ষণে পালংখালী ইউনিয়নের হাজারেরও অধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সকাল থেকে সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি গ্রামীণ সড়কেও গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
কৃপ্র/এম ইসলাম