কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
যশোরের ভবদহ অঞ্চলের কোনো বিলে জোয়ারাধার (টিআরএম) কার্যকর না থাকায় পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে পানি নিষ্কাশনের পথ মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী। ফলে চলতি বর্ষায় ভবদহসংলগ্ন যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। টানা বৃষ্টিপাতে এরই মধ্যে পানি বাড়তে শুরু করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, চলতি বছরও টিআরএম বাস্তবায়ন করা যাবে না। কারণ সরকার এখনো এ খাতে প্রস্তাবিত ৪৪৮ কোটি টাকার প্রকল্প পাস করেনি।
দেখা গেছে, মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী শুকিয়ে সরু খালে পরিণত হয়েছে। নদীর মধ্যে পলি জমে অনেক স্থান উঁচু হয়ে গেছে। ফলে জোয়ারের সঙ্গে পলি এসে দ্রুত ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ভবদহ জলকপাটের সামনে পলি জমেছে। পলি যাতে আরো উজানে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য ২১ ভেন্টের জলকপাটের দুটি দ্বার খোলা রাখা হয়েছে। এ দুটি দ্বার দিয়ে ঢুকছে জোয়ারের পানি।
শ্রী নদীর পাশে বাড়ি মণিরামপুর উপজেলার কপালিয়া গ্রামের কৃষক পঞ্চানন সরকারের। তিনি বলেন, নদী বুঁজে গেছে। ভাটায় এক হাত আর জোয়ারে বুক সমান জল থাকে। এবার নদী দিয়ে জল সরবে না। ডুবে মরতে হবে। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কাটেঙ্গা গ্রামের কৃষক আবু তালেব গাজী বলেন, গত বছর নয়ছয় করে নদী কাটা হয়েছে। এবার নদীর অবস্থা গত বছরেরও চেয়েও খারাপ হয়েছে। এবারো এলাকার অবস্থা খুব খারাপ হবে। টিআরএম ছাড়া বাঁচা যাবে না। একই আশঙ্কা অভয়নগর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের কৃষক যোগেন্দ্রনাথ হালদারের।
ভবদহ জলকপাট দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা যশোর পাউবোর কার্যসহকারী ফারুক আহমদ বলেন, পলি পড়ে নদী ছোট হয়ে আসছে। ২১ ভেন্টের স্লুইস গেটের সামনে নদী একটু গভীর আছে। ওই জায়গায় জোয়ারের সময় ছয় ফুট এবং ভাটায় চার ফুটের মতো পানি থাকছে। নদীর অন্য অংশ তেমন গভীর নয়। জোয়ারের পলি যাতে ছড়িয়ে যেতে না পারে, সেজন্য আমরা মাত্র দুটি গেট খোলা রেখেছি।
এদিকে টিআরএম প্রকল্পের অনিশ্চয়তা না কাটলেও জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগী হচ্ছে পাউবো। ভবদহ স্লুুইস গেটের উজান এবং ভাটিতে টেকা, শ্রী ও হরি নদীতে প্রায় ২২ কিলোমিটার পাইলট চ্যানেল কাটার কাজ শুরু করা হচ্ছে। এজন্য নদীগুলোয় একটি জরিপ শুরু করেছে পাউবো।
এ ব্যাপারে পাউবো, যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, জলাবদ্ধতা এড়াতে টেকা ব্রিজ থেকে খর্ণিয়া ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার নদীর পাইলট চ্যানেল কাটার প্রয়োজন ছিল। এজন্য একটি জরিপ চালানো হয়। কিন্তু মাত্র ১ হাজার ৮০০ মিটার কাটার অনুমতি পাওয়া গেছে। তবে ভবদহের জন্য যে ৪৪৮ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব ছিল, তা এখনো পাস হয়নি। যে কারণে চলতি বছরও টিআরএম বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।
তথ্যসুত্র, দৈনিক বনিক বার্তা/ কৃপ্র/এম ইসলাম