কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
খুলনার ডুমুরিয়ার বিল ডাকাতিয়া অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে ভদ্রা ও শালতা নদী পুনঃখনন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। তবে প্রকল্পের অন্তর্গত দুটি স্লুইস গেট নির্মাণ না করায় খননের সুফল মিলবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দিঘলিয়া ও তেলিগাতির ওই স্লুইস গেট দুটি না হলে নদীতে পলি জমে আবারো প্লাবন দেখা দেবে।
ডাকাতিয়া বিলের মানুষ জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ নিয়ে বেঁচে আছে বছরের পর বছর। ১৯৮৪ সালের অকাল বন্যায় প্লাবনের পর থেকেই তারা মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে। শলুয়া স্লুইস গেটের বাইরে গুপদিয়া নদীতে পলি জমে এ জলাবদ্ধতা চলতে থাকে। একই সঙ্গে ভদ্রা ও শালতা নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা আরো প্রকট আকার ধারণ করে। অথচ এক যুগ আগেও ভদ্রা-শালতা ছিল বহতা নদী। এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও নদী দুটির ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ধীরে ধীরে নানা কারণেই ভদ্রা ও শালতার প্রায় ৩০ কিলোমিটার নাব্য হারায়। পাশাপাশি চলতে থাকে বেপরোয়া অবৈধ দখল। প্রভাবশালীরা যে যার মতো করে ভরাট হওয়া নদীর জমি দখল করে নেয়।
যার পরিণতিতে নদী দুটি দিয়ে এ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের পথ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ে বিল ডাকাতিয়াবাসী। সামান্য বৃষ্টিতেই দেখা দেয় স্থায়ী জলাবদ্ধতা। তলিয়ে যায় হাজার হাজার বিঘা কৃষিজমি। অনেক বসতবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে।
এ পরিস্থিতিতে ২০০৫ সালে নদী দুটি খননের উদ্যোগ নেয় খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। কিন্তু নানা জটিলতায় প্রকল্পটি আটকে থাকে। এরপর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে খননের জন্য ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) জমা দেয়া হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে একনেকে ৭৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা অনুমোদন দেয়া হয়। যার বাস্তবায়ন মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছর।
এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রায় শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। খননের মাধ্যমে ভদ্রা নদীর দক্ষিণ অংশে দিঘলিয়া থেকে ডুমুরিয়া বাজার পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭ কিলোমিটার ও উত্তরাংশের তেলিগাতি থেকে ডুমুরিয়া বাজার পর্যন্ত ৯ দশমিক ৮ কিলোমিটার সংযুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে সালতা নদীর নয় কিলোমিটার খনন করে শৈলমারী নদীতে সংযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের অন্তর্গত নদীর দিঘলিয়া ও তেলিগাতি প্রান্তে দুটি স্লুইস গেট নির্মাণের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্লুইস গেট দুটি নির্মাণ না করেই শেষ হয়েছে প্রকল্পের কাজ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্লুইস গেট দুটি নির্মাণ না করলে জোয়ার-ভাটায় এক বছরের মধ্যেই পলি জমে নদী ফের ভরাট হয়ে যাবে। এছাড়া লবণ-পানি প্রবেশ করলে কৃষিকাজেও ওই পানি ব্যবহার করা যাবে না। ফলে জলাবদ্ধতা নিরসনে নদী খননের পুরো প্রকল্পই ব্যর্থ হবে।
এ বিষয়ে কথা হলে পাউবোর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. লুত্ফর রহমান বলেন, ‘ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) প্রকল্পটি নিয়ে স্টাডি করছে। স্টাডির একটি অন্যতম পরিকল্পনা হচ্ছে হামকুড়া নদী খনন করা। হামকুড়া নদী খননের জন্যই স্লুইস গেট নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা হয়েছে।’ তবে হামকুড়া নদীর খননকাজ কবে নাগাদ শুরু হবে, তা তিনি বলতে পারেননি।
বিল ডাকাতিয়া অঞ্চলের সংস্কৃতিকর্মী ড. সন্দীপক মল্লিক বলেন, ‘আমরা জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান চাই। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় নদী দুটি খনন সমাপ্ত করা হয়েছে, তা সন্তোষজনক নয়। এ অবস্থায় আগামী বছর পলি জমে নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, ‘নদী দুটির খনন প্রায় শেষ হয়েছে। এতে বিল ডাকাতিয়াসহ এ অঞ্চলের জলাবদ্ধতার নিরসন হবে।’
তথ্যসুত্র, দৈনিক বনিক বার্তা/ কৃপ্র/এম ইসলাম