‘সেন্ট্রাল টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি ও গ্রিন হাউজের উদ্বোধন’
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় দেশ আজ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তিনি আজ রোববার রাজধানীর গাবতলিতে বিএডিসি আয়োজিত ‘বীজআলু হিমাগার, সেন্ট্রাল টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি ও গ্রিন হাউজের উদ্বোধন ও বিএডিসি’র বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের শুভ সূচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, কৃষির সাম্প্রতিক সাফল্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে অনন্য মর্যদায় স্থান দিয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। তিনি বলেন, জাতির পিতার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কৃষি উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণের কারণেই এ অর্জন সম্ভব হযেছে।
মন্ত্রী বলেন, বিনামূল্যে ও স্বল্পমূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ, সহজ শর্তে কৃষিঋণের সুযোগ বৃদ্ধি, কৃষি যান্ত্রিকীকরণে শতকরা ৫০ থেকে ৭০ ভাগ উন্নয়ন সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে কৃষকের কাছে কৃষি যন্ত্রপাতি সহজলভ্য করা, ই-কৃষির সম্প্রসারণ, বিভিন্ন ফসলের উন্নত জাত ও লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গবেষণায় সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদানসহ সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণেই দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের ধান, আলু, শাকসবজি উৎপাদনে বিরাট সফলতা অর্জিত হয়েছে এবং ভুট্টা, ডাল, তেল ও মসলায় উল্লেখযোগ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ এখন চাল উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ, শাকসবজি উৎপাদনে তৃতীয়, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয় ও কাঁচা পাট রপ্তানিতে প্রথম, আলু ও পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, আম উৎপাদনে সপ্তম।
তিনি বলেন,কৃষির উন্নতিকল্পে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা ও নীতি প্রণয়ন করেছে। দক্ষিণাঞ্চল, হাওর-বাঁওড় এলাকায় কৃষির উন্নয়নে সরকার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
বিভিন্ন ফসলের জলবায়ু সহনশীল জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। জৈব প্রযুক্তি গবেষণায় সরকারের ইতিবাচক নীতির ফলস্বরূপ বিটি বেগুনের উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ মাইলফলক তৈরি করেছে। পাটের জিনোম রহস্য আবিষ্কৃত হয়েছে এবং এর ধারবাহিকতায় কাঙ্খিত পাটের জাত তৈরির পথ সুগম হয়েছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৫ লাখ হেক্টর জমিতে এক কোটি মেট্রিক টনের অধিক খাবার আলু উৎপাদিত হচ্ছে। দেশে প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন বীজআলুর চাহিদা রয়েছে। বিএডিসি চাহিদার প্রায় ৬ শতাংশ বীজআলু চাষিদের মাঝে সরবরাহ করছে। কৃষক বিএডিসি’র সরবরাহকৃত বীজ পরবর্তী তিন উৎপাদন মৌসুমে পুনরায় বীজ হিসেবে বর্ধন ও ব্যবহার করে থাকে। বীজআলু উৎপাদনে বৃদ্ধির হার ১০ গুণ বিবেচনা করলে দেখা যায় বিএডিসি প্রতি বৎসর চাহিদার ৬০ ভাগ মানসম্পন্ন বীজ প্রতিস্থাপন করছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বিএডিসি’র ৩০টি হিমাগারের ধারণক্ষমতা ৪৫ হাজার ৭শ’ মেট্রিক টন। তন্মধ্যে মিরপুর হিমাগারে ২ হাজার মেট্রিক টন বীজ আলু সংরক্ষণের সক্ষমতা আছে। আগামী ২০২০-২১ সাল নাগাদ ৬০ হাজার মেট্রিক টন বীজ আলু সংরক্ষণের সুবিধা তৈরি হবে এবং যা জাতীয় চাহিদার ১০ ভাগ।
বিএডিসি এর এ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারের মেয়াদকালে ৩টি টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি স্থাপন করেছে। উক্ত ল্যাবরেটরিতে টিস্যু কালচার প্রযুক্তির মাধ্যমে প্লান্টলেট এবং তা থেকে মিনি টিউবার, ব্রিডার, ভিত্তি ও প্রত্যায়িত বীজআলু উৎপাদন করে কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করছে। এ প্রক্রিয়ায় বিএডিসি বীজআলু আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা ১৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আসলামুল হক ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্। সভাপতিত্ব করেন বিএডিসি’র চেয়ারম্যান মো. নাসিরুজ্জামান। আলোচনা শেষে কৃষিমন্ত্রী বিএডিসি প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ করেন।
সুত্র, বাসস/ কৃপ্র/এম ইসলাম