কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
দেশের অন্যতম মৎস্যভাণ্ডার নেত্রকোনা জেলার হাওড়গুলোতে এ বছর মাছের সংকট দেখা দেয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। জেলেরা বলছেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার তাদের জালে অন্যান্য মাছের সঙ্গে পোনা মাছও ধরা পড়ছে অনেক কম। যেখানে এরই মধ্যে দেশীয় মাছের ডিম দেয়ার সময় পেরিয়ে গেছে।
জেলার মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী এ তিন উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত হাওড়াঞ্চল। প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ টন ধান উৎপাদনের পাশাপাশি এসব হাওড় থেকে বর্ষা মৌসুমে বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এক হিসাবে প্রতি বছর স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৭৪ হাজার টন মাছ বিভিন্ন জেলায় যায়।
কিন্তু এবার ভরা বর্ষার মৌসুমেও উল্লেখযোগ্য মাছ ধরা পড়ছে না। দেখা মিলছে না দেশীয় পোনা মাছের। জেলেরা বলছেন, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়া, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, মা-মাছের অভয়াশ্রম ধ্বংস করায় হাওড়ে মাছ কমে যাচ্ছে। তাছাড়া গত বছর আগাম বন্যায় পানি দূষিত হয়ে মাছের মড়ক দেখা দিয়েছিল।
বৈশাখ মাসের শুরুর দিকে বৃষ্টিপাত হলে হাওড়ের নতুন পানিতে ১৫ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে রুই, কাতলা, বোয়াল, শিং, মাগুর, কৈ, গইন্যা, আইড়, সরপুঁটি, কালবাউশ, চিংড়ি, শোল, গজারসহ প্রায় ৫০ প্রজাতির দেশীয় মা-মাছ প্রচুর ডিম দেয়। কয়েক দিনের মধ্যে ডিম থেকে রেণু পোনা ফুটতে শুরু করে। ফলে আষাঢ় মাসে জেলেদের জালে প্রচুর পরিমাণে পোনা মাছ ধরা পড়ে। এ বছর শ্রাবণ মাস শুরু হলেও পোনা মাছ চোখে পড়ছে না। ধরা পড়ছে না অন্যান্য মাছও। ভবিষ্যৎ সংকটের কথা ভেবে মুষড়ে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা।
খালিয়াজুরীর মৎস্যজীবী পরিমল বর্মণ ও মোহনগঞ্জের মাঘান গ্রামের আবু তাহের বলেন, ‘দুই বছর আগেও এ সময় জালে ছোট সাইজের রুই, কাতলা, বোয়াল, কালবাউশ, গইন্যা, আইড়সহ নানা জাতের প্রচুর পোনা মাছ পাইতাম। কিন্তু এবার তেমন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।’
মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঋতু পরিবর্তন, হাওড়াঞ্চলের ফসল রক্ষায় অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয়গুলো দিন দিন ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে মাছের প্রজনন কমে যাচ্ছে।
খালিয়াজুরী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, হাওড়ে প্রায় ৫০ প্রজাতির দেশীয় মাছ রয়েছে। নতুন পানি এলে মা-মাছ প্রচুর ডিম ছাড়ে। সেখানে প্রায় ১০ টন রেণু পোনা উৎপাদন হয়। বিস্তীর্ণ হাওড়ে সেসব পোনা দ্রুত বড় হয়। প্রতি বছর এখানে প্রায় ১২ হাজার টন মাছ উৎপাদন হয়। এ উপজেলায় আট হাজার নিবন্ধিত জেলে ছাড়াও বর্ষাকালে মৎস্য আহরণে জড়িত থাকে অন্তত ১৫ হাজার পরিবার। কিন্তু এ খালিয়াজুরী উপজেলার বিভিন্ন হাওড়ে অপরিকল্পিত ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কারণে মাছের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, গত বছর জেলার হাওড় থেকে প্রায় ৭৪ হাজার টন মাছ আহরিত হয়েছিল, যার মূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। কিন্তু ফসল উৎপাদনে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ, পলি পড়ে প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া, পর্যাপ্ত অভয়াশ্রম না থাকা, জলমহালগুলোয় বিষ দিয়ে মাছ শিকার ও শুকিয়ে মাছ ধরার প্রবণতা মাছের উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলেছে। তবে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয় ঠিক করতে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন দিতে বলেছেন বলে জানান তিনি। পাশাপাশি বৃষ্টি হলে এক মাসের মধ্যে সংকট কেটে যাবে বলেও আশা করছেন এ মৎস্য কর্মকর্তা।
সুত্র, দৈনিক বনিক বার্তা/ কৃপ্র/এম ইসলাম