কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
নড়াইল জেলার সদর ও লোহাগড়া উপজেলার মিঠাপুর, নলদী, সদরের হবখালী, শংকরপুর, রতডাঙ্গা, তুলারামপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, চিত্রা, নবগঙ্গা ও কাজলা নদীর দুই তীরে পাট পচানো হচ্ছে। বহুদূর পর্যন্ত নাকে আসছে দুর্গন্ধ পাশাপাশি মরে যাচ্ছে মাছ।
জানা গেছে, নড়াইল জেলায় যে পাট উৎপাদন হয়, তার অন্তত ৬৫ শতাংশই পচানো হয় নদীতে। পুকুর, ডোবা, উন্মুক্ত জলাশয় ভরাট ও দখলের কারণে নদীতে পাট পচানোর পরিমাণ বছর বছর বাড়ছে। অন্যদিকে রিবন রেটিং পদ্ধতি সম্পর্কেও কৃষি বিভাগ কোনো প্রশিক্ষণ বা মাঠ পর্যায়ে ধারণা দিচ্ছে না বলে অভিযোগ কৃষকদের।
কৃষক, জেলে ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ৮-১০ বছর ধরে জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নবগঙ্গা, চিত্রা ও কাজলা নদীর অন্তত ৭০ কিলোমিটারজুড়ে পাট জাগ দেয়া হচ্ছে। এ সময়টায় নদীগুলো প্রায় মত্স্যশূন্য হয়ে পড়ে। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মাছ মরে যায়।
সদরের পাজারখালী এলাকার তমিজ শেখ (৬৮) জানান, নদীতে এ মৌসুমে মাছ না থাকায় শত শত জেলে পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। এছাড়া নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ এ পানিতে গোসল, কাপড় ধোয়াসহ সংসারের দৈনন্দিন কাজ করে। এতে বিভিন্ন প্রকার রোগবালাই ছড়াচ্ছে।
রতডাঙ্গা গ্রামের গৃহিণী আমেনা খাতুন জলি জানান, নদীর পানি পচে যাওয়ায় এ পানি দিয়ে কোনো কাজই করা যাচ্ছে না। তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। ছেলেমেয়েদের পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ হচ্ছে। বছরের এ তিন মাস তারা নদীর পানি ব্যবহার করতে পারেন না।
পাটের মৌসুমে নদী মাছশূন্য হয়ে পড়ার কথা উল্লেখ করে স্থানীয় জেলে সুধীর দাসের ছেলে অসীম দাস জানান, নদীতে পাট জাগ দেয়ার কারণে বছরে প্রায় চার মাস কোনো মাছই পান না তারা। এ সময় সম্পূর্ণ বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করেন।
পাট পচানোর কারণে নদী মাছশূন্য হয়ে পড়ার কথা স্বীকার করে নড়াইল জেলা মত্স্য কর্মকর্তা মো. এনামুল হক বলেন, এ কারণে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মাছ মরে পচে যাচ্ছে। এতে দেশী মাছ হুমকির মুখে পড়ছে। জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় বিষয়টি তিনি উপস্থাপন করার আগেই জেলা প্রশাসক পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি বিভাগকে বিষয়টি অবগত করেছেন।
জেলা প্রশাসক মো. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, নদীতে পাট না পচানোর জন্য জেলার সমন্বয় কমিটির সভায় সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। পাশাপাশি কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক চিন্ময় রায় বলেন, এ বছর জেলায় পাটের আবাদ হয়েছে প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে। কৃষকদের নদীতে পাট না পচিয়ে রিবন রেটিং পদ্ধতি অবলম্বনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। গত বছর জেলায় সাড়ে ৭০০ কৃষকের মাঝে রিবন রেটিং যন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। তবে এ বছর বরাদ্দ না থাকায় বিতরণ বন্ধ। তার পরও কয়েকশ কৃষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
সুত্র, বনিক বার্তা/ কৃপ্র/এম ইসলাম