কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
একসময় নোয়াখালীর চরাঞ্চলের মাটিতে লবণাক্ততার কারণে কোন ফসল হত না। আর এখন নোনা মাটির এসব চর শুধুই সবুজ। এখানকার চাষাবাদ পদ্ধতি দেশের অন্য সব এলাকা থেকে আলাদা। একই সঙ্গে জলাশয়ে মাছ চাষ, পানিতে হাঁস। তার পাড়ে শিম, শসা, বরবটি, করলা, লাউ, কুমড়া, ঝিঙে আর পটোলের চাষ হচ্ছে। বাড়ির পাশের জলাশয়ের পানির ওপর গড়া মাচায় লতানো সবজি চাষাবাদের এই পদ্ধতির নাম ‘সর্জন’।
সুবর্ণচর উপজেলার আটটি ইউনিয়নের তিনটি চরওয়াপদা, চর ক্লার্ক, মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন লোকসংখ্যা দুই লাখের মতো। নদী ভাঙ্গার কারনে ঘরবাড়ি হারানো লোকজন এসে এখানে বসত গড়েছিল। বসত গড়ার জন্য নিচু জমিকে উঁচু করে নিতে হয়েছে এবং এ কারণে প্রত্যেকেই বাড়ির পাশের জমি থেকেই মাটি সংগ্রহ করতে হয়েছে। আর তৈরি হয়েছে পুকুর আর সেইসব পুকুরকে ঘিরেই এখন বাস্তবায়িত হচ্ছে ‘সার্জন’, যা চরের কৃষিতে বিপ্লব এনেছে।
পুকুরপাড়গুলো বেশ উঁচু করা এবং পাড়ে বপন করা হয় লতানো সবজির। প্রায় সবার বাড়িতেই রয়েছে গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগির ছোট ছোট খামার।
মূলত ২০১২ সালের দিকে ভোলা থেকে আসা দু-একটি পরিবার সর্জন পদ্ধতির চাষাবাদ শুরু করে। এখন আর এমন কোনো পরিবার নেই, যারা সর্জন পদ্ধতির চাষাবাদ করছে না। আগে যখন শুধুই ধান চাষ করা হতো, তখন পরিবারপ্রতি মাসিক আয় হাজার তিনেক টাকা, এখন তা ১০/১২ হাজার টাকার মতো হয়েছে।
কৃষিবিদ রাধেশ্যাম সূত্রধর বলেন, সর্জন পদ্ধতির চাষাবাদ শুরু হয়েছিল ইন্দোনেশিয়ায় এবং ইন্দোনেশিয়ায় সর্জন নামে এক ব্যক্তি এই চাষ-পদ্ধতির প্রবর্তক। ২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত চরের কৃষকরা সনাতন পদ্ধতিতে স্থানীয় জাতের বীজের মাধ্যমে ধান চাষ করতেন। মূলত ২০১৪ সাল থেকে কৃষকরা ‘সার্জন’ চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে এবং নিজ নিজ জমিতে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে কয়েক গুণ বেশি আয় করতে পারেন। এর পর থেকে চরে সর্জন পদ্ধতিতেই চাষাবাদ চলছে।
সর্জন পদ্ধতিতে শুধু ২০১৭ সালেই এখানকার কৃষকরা ৩৫ হাজার ৬৩৩ টন সবজি উৎপাদন করেছেন। সার্জন পদ্ধতির চাষাবাদে পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি ভূমিকা
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট নোয়াখালী কার্যালয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমির ফয়সাল বলেন, সর্জন পদ্ধতির চাষাবাদকে স্থায়ী করার জন্য গবেষণা ও মাঠ জরিপের কাজ শেষ করা হয়েছে। আমরা যাচাই করে দেখছি, এ পদ্ধতিতে আর কোন কোন জাতের সবজি ফলন করা যায়। যেসব সবজি চাষ হচ্ছে, সেগুলোর উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়েও গবেষণা ও চলছে। এ জন্য একটি প্রকল্পও প্রণয়ন করা হয়েছে।
কৃপ্র/এম ইসলাম