কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রাজশাহীতে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে পদ্মার পানি । নদীতীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। নির্মাণাধীন রাজশাহীর বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটির কাছাকাছি চলে এসেছে পানি। তথ্যসুত্র- দৈনিক বনিক বার্তা।
এদিকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে পাংশা উপজেলার সেনগ্রাম পর্যন্ত ভাঙন অব্যাহত আছে। ৮৫ কিলোমিটার নদীপথ এলাকায় প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা ভাঙছে। গৃহহীন হয়ে পড়ছে শত শত মানুষ। রাজবাড়ী শহরের আশপাশে কয়েকটি এলাকা ছাড়া ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড।
রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলায় ভাঙনকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তীব্র স্রোতে চোখের নিমেষে হারিয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি। ভিটেমাটি হারানো মানুষ ঘোড়া বা মহিষের গাড়িতে করে যতটুকু সম্ভব আসবাব নিয়ে অজানার উদ্দেশে পাড়ি দিচ্ছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রতনদিয়া ইউনিয়নের লস্করদিয়া-নারায়ণপুর, আলোকদিয়া, চররাজপুর, হরিণবাড়িয়া, ভবানীপুর, লস্করদিয়া, সাদারচর ও কালিকাপুর ইউনিয়নের নারানদিয়া গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
কালুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ বলেন, রতনদিয়া ইউনিয়নের হরিণবাড়িয়ার চরে সেনানিবাস হওয়ার কথা ছিল। ২০১৬ সালে মহড়ার জন্য রাষ্ট্রপতির জন্য বিশ্রামাগার ও সেনাবাহিনীর ব্যারাক নির্মাণ করা হয়। গত বছর সেসব অবকাঠামো নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ বছর শত শত বিঘা ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে। আমরা ভাঙন ঠেকানোর জন্য পাউবো ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।
একই অবস্থা শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলায়। প্রায় আড়াই মাস ধরে অব্যাহত ভাঙনে গৃহহীন হয়ে পড়েছে প্রায় চার হাজার পরিবার। নড়িয়া উডজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিও ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে নদীপাড়ের মানুষ। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নড়িয়া উপজেলা ইউএনও। ভাঙন রোধে বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পাউবো।
জানা গেছে, সম্প্রতি চীনে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় ৫০ বছরের মধ্যে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে চীন ও ভারতের এই নদ অববাহিকায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। এর প্রভাবে বান ডেকেছে পদ্মায়ও। প্রতিদিনই ফুলেফেঁপে উঠছে পদ্মা। উজানের ঢলে এরই মধ্যে তলিয়ে গেছে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মাতীরবর্তী চর এলাকাগুলো। দেখা দিয়েছে তীব্র নদীভাঙন। বিশেষ বরে রাজশাহী শহরের ওপারের পদ্মার চর খিদিরপুর, গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ বাঘার চকরাজাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের কোদালকাটি, শিবগঞ্জের পাকা নারায়ণপুর ইউনিয়নে দেখা দিয়েছে ব্যাপক বন্যা।
এসব এলাকায় পানিবন্দি হয়ে রয়েছে হাজারো মানুষ। পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে বসতবাড়ি, বিদ্যালয়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হাটবাজারসহ বহু স্থাপনা। নদীতে চলে গেছে ফসলি জমি। মানবিক সহায়তা নেই বললেই চলে। এতে অসহায় জীবন যাপন করছে দুর্গতরা।
রাজশাহী পাউবো নগরীর বড়কুঠি স্ল্যান্টিং গেজ পাঠক এনামুল হক জানান, রাজশাহীতে পদ্মায় বিপত্সীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। গত ১ আগস্ট পদ্মায় প্রবাহ ছিল ১৪ দশমিক ৭১ মিটার। বাড়তে বাড়তে ১১ আগস্ট তা গিয়ে দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৩৬ মিটারে। ৩১ আগস্ট পদ্মায় প্রবাহ দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৩৯ মিটার। এরপর প্রতিদিনই বেড়েছে পদ্মার পানি। ১ সেপ্টেম্বর ১৬ দশমিক ৫২ ও ৬ সেপ্টেম্বর ১৭ দশমিক ১৬ মিটারে ছিল। সর্বশেষ গতকাল ২৪ ঘণ্টায় প্রবাহ বেড়েছে ১ সেন্টিমিটার। বেলা ৩টায় প্রবাহ ছিল ১৭ দশমিক ১৭ মিটার।
এ বিষয়ে রাজশাহী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান বলেন, চীনে বন্যার তথ্য আমাদের কাছে আছে। যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত। যেসব স্থাপনা আমাদের আছে, সেগুলো বন্যায় যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেগুলো জরুরি ভিত্তিতে রক্ষা করা যায়, এমন প্রস্তুতিও আমাদের যথেষ্ট আছে।
কৃপ্র/এম ইসলাম