‘প্রয়োজনের অর্ধেক জিংক নেই কথিত ‘মিনিকেট’ চালে!
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
ভোক্তাদের অন্যতম পছন্দের চাল মিনিকেটে জিংকের পরিমাণ পাওয়া গেছে ৬ দশমিক ৩৬ পিপিএম। মানুষের পুষ্টিচাহিদা পূরণে প্রতি কেজি চালে ১২ পিপিএম জিংক থাকা প্রয়োজন। কিন্তু মূলত ধান থেকে ছাঁটাই প্রক্রিয়ায় চালের উপরিভাগের পুষ্টিযুক্ত অংশ ফেলে দেয়ার কারণে জিংক ও পুষ্টিগুণ হারায় মিনিকেট। জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি উন্নয়নে কাজ করে আসা আন্তর্জাতিক সংস্থা হারভেস্টপ্লাসের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মিনিকেট চালে সবচেয়ে কম জিংক রয়েছে। আর সবচেয়ে বেশি জিংক পাওয়া গেছে নাজিরশাইলে, প্রতি কেজিতে ১২ দশমিক ৯২ পিপিএম। এর পরই কাটারিতে ১১ দশমিক ৩৯ পিপিএম, স্বর্ণায় ৮ দশমিক ৯ পিপিএম, বাংলামতিতে ৭ দশমিক ৬২, ব্রি ধান ২৮ চালে ৯ দশমিক ৬৮ এবং অন্যান্য চালে ১০ দশমিক শূন্য ৪ পিপিএম মাত্রায় জিংক পাওয়া গেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, অবৈজ্ঞানিক মিলিং প্রক্রিয়ার কারণে বিভিন্ন চালের পুষ্টিগুণ নষ্ট হচ্ছে। এজন্য সঠিক ও কার্যকর মিলিং প্রক্রিয়া অনুসরণ করে চালের পুষ্টিগুণ ধরে রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি জিংকসমৃদ্ধ জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ ছাড়া দেশে পুষ্টিনিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
হারভেস্টপ্লাস বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার ড. মো. খায়রুল বাশার বলেন, দেশের পাঁচ বছরের নিচে এমন বয়সী ৪১ শতাংশ শিশু এখনো জিংক স্বল্পতায় ভুগছে। আবার বিভিন্ন বয়সী ৭৩ শতাংশ নারীরও রয়েছে জিংক স্বল্পতা। পাঁচ বছর বয়সী তিনজন শিশুর মধ্যে একজন খর্বাকৃতির। সার্বিকভাবে বাংলাদেশ এখন উচ্চমাত্রার অপুষ্টির ঝুঁকিতে। পুষ্টিনিরাপত্তাকে স্বাস্থ্যগত ইস্যু হিসেবে বিবেচনা না করে কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন করা সম্ভব বলে জানান তিনি।
পুষ্টিনিরাপত্তায় বায়োফরটিফায়েড শস্য অন্যতম বিকল্প হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এ পর্যন্ত ১৬টি বায়োফরটিফায়েড শস্য জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আটটি জিংকসমৃদ্ধ ধানের জাত, তিনটি জিংক ও আয়রনসমৃদ্ধ মসুরের জাত, একটি জিংকসমৃদ্ধ গমের জাত এবং চারটি ভিটামিনসমৃদ্ধ মিষ্টি আলুর জাত। পুষ্টিনিরাপত্তা বাড়াতে গেলে সামনের দিনে আরো বায়োফরটিফায়েড শস্য জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ করতে হবে।
‘মিনিকেট’ নামে বাংলাদেশে অনুমোদিত কোনো ধানের জাত না থাকলেও মূলত ব্রি ধান ২৮ কিংবা ব্রি ধান ২৯, কল্যাণী, স্বর্ণা, গুটিস্বর্ণা, লাল স্বর্ণা, ব্রি ধান ৫০, জাম্বুু ও কাজললতা এমন সব বিভিন্ন জাতের চাল ছেঁটে মিনিকেট বলে বাজারে বিপণন করা হচ্ছে। একশ্রেণীর চালকল মালিক ভোক্তাদের বোকা বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মোটা চাল সরু করে তা মিনিকেট নামে চালিয়ে যাচ্ছে। কাটিং, পলিশ ও কালার ঠিক রাখার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন কেমিক্যাল। এতে চালের পুষ্টিগুণ যেমন কমে যাচ্ছে, তেমনি তা মানবদেহে নানা রোগবালাইয়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (ব্রি) গবেষণা পরিচালক ড. তমাল লতা আদিত্য বলেন, এক ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের কাছে মিনিকেট নামের চাল বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ মিনিকেট নামে কোনো জাত বাংলাদেশে উদ্ভাবন হয়নি।
কৃপ্র/এম ইসলাম