কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
ভাইরাসের সংক্রমণে চিংড়ির মড়ক দেখা দিয়েছে সাতক্ষীরার ঘেরগুলোতে। একদিকে রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব, অন্যদিকে চিংড়ির দাম কমে যাওয়ায় তাদের এখন সর্বস্বান্ত হওয়ার দশা। তাদের এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। জেলার ছোট-বড় চিংড়িচাষীরা কমবেশি সবাই এখন ভুক্তভোগী। আশঙ্কা করা হচ্ছে, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরার ঘেরগুলোয় ১০০ কোটি টাকার বেশি দামের চিংড়ি মারা গেছে।
সাতক্ষীরা জেলার প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে গড়ে তোলা ঘেরগুলোয় মূলত বাগদা, গলদা ও হরিণা প্রজাতির চিংড়ির চাষ করা হয়। এর মধ্যে বাগদা ও গলদা রফতানি করা হয়। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, ঘেরে পানিস্বল্পতা, পরিবেশসম্মত না হওয়া ও রেণু পোনা জীবাণুমুক্ত না হওয়ায় ভাইরাস দেখা দিচ্ছে।
বাংলাদেশ চিংড়িচাষী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার আবুল কালাম বাবলা জানান, চলতি মৌসুমে প্রায় দেড় হাজার বিঘার ঘেরে বাগদা চিংড়ি চাষ করেছিলেন তিনি। কিন্তু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঘেরের অধিকাংশ চিংড়ি মরে গেছে।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আবদুর রব জানান, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ির চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো দাম পাচ্ছেন না চাষীরা। দুই মাস আগে যে চিংড়ি ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, তা এখন ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে চাষী ও প্রক্রিয়াজাতকারী ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০১৮ মৌসুমে সাতক্ষীরার ছয়টি উপজেলার ৪৯ হাজার ১৬৩টি নিবন্ধিত ঘেরে রফতানির জন্য বাগদা চিংড়ি চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ২ হাজার ১০৫টি ঘের, তালায় ১ হাজার ২৯৫টিতে, দেবহাটায় ২ হাজার ৮২৯টিতে, আশাশুনিতে ১৩ হাজার ২১৭টিতে, কালিগঞ্জে ১৪ হাজার ৫৫৯টিতে ও শ্যামনগর উপজেলায় ১৫ হাজার ১৫৮টি ঘেরে রফতানির জন্য বাগদা চিংড়ি চাষ করেছিলেন চাষীরা। জেলায় এবার চিংড়ির উৎপাদন বাড়ার প্রত্যাশা করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, এ জেলায় চিংড়িতে এত মারাত্মক আকারে ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ঘেরে পানিস্বল্পতা ও পরিবেশসম্মত উপায়ে চিংড়ি চাষ না করা। জেলার অধিকাংশ ঘেরেই ৩ ফুট পরিমাণ পানি থাকে না। এছাড়া এখানে ঘেরগুলোও তৈরি করা হচ্ছে বেশ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। যে রেণু পোনা ছাড়া হয়, তা ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত নয়। ঘেরের তলাও ঠিকমতো শুকানো হয় না। যথাযথভাবে স্বাস্থ্য ও পরিবেশসম্মত পদ্ধতিতে চাষ না করার কারণেই ঘেরে ভাইরাসের সংক্রমণ হয়ে মড়ক লাগে।
কৃপ্র/এম ইসলাম