কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
ধান উৎপাদনে বাংলাদেশকে আরো এক ধাপ এগিয়ে তৃতীয় স্থানে আনার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান (ব্রি)। এক্ষেত্রে ইন্দোনেশিয়াকে পেছনে ফেলে স্থানটি অর্জন করতে হবে। তবে কাজটি সহজ নয়। সেটি করতে হলে আমাদের ধান উৎপাদনে আরো প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও গবেষণা প্রয়োজন। সরকারের সহযোগিতা নিয়ে সেটিই করে যাচ্ছে ব্রি। দুই দিনব্যাপী জৈবপ্রযুক্তিবিষয়ক এক কর্মশালায় ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর এ কথা বলেন।
রাজধানীর একটি হোটেলে সম্প্রতি ‘নলেজ শেয়ারিং অ্যান্ড ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ওয়ার্কশপ অন এগ্রিবায়োটেকনোলজি রিপোর্টিং’ শীর্ষক ওই কর্মশালার প্রধান অতিথি ছিলেন ব্রির মহাপরিচালক। ব্রির কারিগরি সহায়তায় আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) ও ফার্মি ফিউচার বাংলাদেশ যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে। ইরির বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. হোমনাথ ভাণ্ডারীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ইরির ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট ও ব্রির সাবেক মহাপরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস ও ইরি বাংলাদেশ অফিসের সিনিয়র ম্যানেজার ড. সৈয়দ মো. ইব্রাহীম।
কর্মশালায় বাংলাদেশে গোল্ডেন রাইসের অগ্রগতি ও বর্তমান অবস্থা তুলে ভিডিও প্রেজেন্টেশন করেন ব্রির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. পার্থ সারথী বিশ্বাস। বাংলাদেশে এলআরবি পটেটো, বিটি বেগুন ও বিটি কটনের ওপর উপস্থাপনা করেন ড. একেএম কামরুজ্জামান, ড. মো. কামরুল ইসলাম।
কর্মশালায় ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, বিজ্ঞানীরা শুধু বর্তমানের চিন্তা করে না। আগামীর চিন্তাই তারা বেশি করে। যেমন বর্তমানে আমরা ৫০ বছর অর্থাৎ আগামী ২০৫০ সালে বাংলাদেশের লোকসংখ্যা কত হবে এবং তাদের খাদ্যের জোগান কেমন করে দেয়া হবে, তা নিয়ে এখন থেকেই কাজ শুরু করে দিয়েছি।
গোল্ডেন রাইস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিটা ক্যারোটিনসমৃদ্ধ গোল্ডেন রাইস নতুন একধরনের ধান, যা মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন
এ-সমৃদ্ধ। এটি জেনেটিক্যালি মডিফায়েড (জিএম) ফসল হলেও খাদ্য হিসেবে একেবারেই নিরাপদ। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর, এমন কিছু করার চিন্তাও করা সম্ভব নয়।
কর্মশালার কারিগরি সেশনে গোল্ডেন রাইস, বিটি বেগুন, বিটি তুলাসহ বিভিন্ন জৈবপ্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ভাবিত ফসল সম্পর্কে উপস্থাপনা তুলে ধরেন ব্রি, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা। পরে বিজ্ঞানীরা সাংবাদিকদের এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। কর্মশালার কারিগরি সেশনে বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালায়েন্স ফর সায়েন্সের প্রশিক্ষক প্যাট্রিশিয়া নানতেনজা ও ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ।
কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, একুশ শতকের কৃষি মানেই প্রযুক্তির ছোঁয়া। বিজ্ঞানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন ফসল ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছেন। বিজ্ঞানের আশীর্বাদে এখন ফসল বোনা থেকে খাবার টেবিল পর্যন্ত সামগ্রিক প্রক্রিয়া সহজসাধ্য হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞানের সুনিপুণ কৌশলকে কাজে লাগিয়ে ফসলের বীজ ও উদ্ভিদের অভ্যন্তরীণ কাঠামোয় পরিবর্তন ঘটিয়ে মানুষের প্রয়োজন মেটানোর যে প্রচেষ্টা, সেটাই জৈবপ্রযুক্তি, বৈজ্ঞানিক মহলে যা ‘বায়োটেকনোলজি’ হিসেবে পরিচিত। ভবিষ্যতের কৃষির উত্কর্ষ এ জৈবপ্রযুক্তিকে ঘিরেই আবর্তিত হবে।
বিজ্ঞানীদের মতে, নিকট ভবিষ্যতে মানুষের চাহিদামতো নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার জোগান দিতে অন্যতম উপায় হয়ে উঠবে জৈবপ্রযুক্তির ব্যবহার। তবে এ অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগুলো নিয়ে সঠিক তথ্যের অভাবে জনমনে কিছুটা বিভ্রান্তি রয়েছে। কারণ এ সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞানের অভাবে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অনেক বিজ্ঞানমনস্ক মানুষও এ প্রযুক্তি নিয়ে বিভ্রান্ত হন। অথচ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে হরহামেশাই আমরা জৈবপ্রযুক্তি উদ্ভাবিত খাবার গ্রহণ ও পণ্য ব্যবহার করছি। এ প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্দেশ্য কৃষি সাংবাদিকদের এ বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা ও সঠিক তথ্যনির্ভর কৃষি সংবাদ প্রচারে সহায়তা করা।
তথ্যসুত্র/ দৈনিক বনিক বার্তা / কৃপ্র/এম ইসলাম