“বায়োচার প্রযুক্তিটি দেশের কৃষিতে এক অনন্য মাত্রা যোগ করবে”
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বায়োচার পদ্ধতির সাহায্যে বিভিন্ন জৈব পদার্থ, যেমন: ধানের তুষ, কাঠের গুঁড়া, কাঠ, মুরগির বিষ্ঠা এমনকি নালা-নর্দমার বর্জ্য পদার্থ, আবর্জনা থেকে তৈরি করা হয়। বায়োচার পানি বিশুদ্ধকরণ এবং মাটির লবণাক্ততা কমাতেও ভূমিকা রাখে।
মাটির স্বাস্থ্যরক্ষায় বায়োচার একটি অদ্বিতীয় অনুষঙ্গ। বায়োচার জমিতে একবার ব্যবহার করলেই দীর্ঘ সময় আর ব্যবহার করতে হয় না। বায়োচার কার্বনকে বছরের পর বছর মাটিতে ধরে রাখে, ফলে মাটির স্বাস্থ্যের স্থায়ী উন্নয়ন ঘটে। বায়োচার মাটিতে প্রায় ১০০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। আর শতবর্ষ ধরে এটি মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করে নানাভাবে।
এখন কৃষি বিজ্ঞানের ক্রমাগত ব্যাপক উন্নতি দেখা যাচ্ছে। বায়োচার তার একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। ক্ষুদ্র অংশ হওয়া সত্ত্বেও বায়োচার কৃষিজ পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে পরিবেশের ভারসাম্য-রক্ষায় সমান ভূমিকা পালন করছে। বায়োচার ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি, পানির ধারণ-ক্ষমতা, সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
বায়োচার মাটিতে গাছের খাদ্য উপাদানগুলোকে ধরে রাখে, মাটিতে লবণাক্ততা ও খরার প্রভাব এবং মাটির অম্লত্ব দূর করে। মাটিকে সংশোধন করে বায়োচার মাটিতে অবস্থানকারী ছোট-ছোট অণুজীবকে সক্রিয় করে তোলে। পরিবেশবান্ধব এই বায়োচার পদ্ধতি ব্যবহারে জমির ফলনও দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়।
বায়োচার ব্যবহারে রাসায়নিক সার ও পানি সেচ কম দিতে হয়; ফলে কৃষকের খরচ কমে যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্তির জন্য মাটিতে বায়োচার ব্যবহার করা হচ্ছে।
বায়োচার আলু, সবজি চাষেও ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃষকরা অধিক লাভবান হওয়ার জন্য এবং মাটির গুণাগুণ অক্ষুণœ রাখতে বায়োচার পদ্ধতি ব্যবহার করতে আগ্রহী হচ্ছেন। আবর্জনা ব্যবহার করে যদি বায়োচার উৎপন্ন করা যায়, তবে একদিকে যেমন আবর্জনা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, অন্যদিকে এটি সার হিসেবে জমিতে ব্যবহার করা যাবে। আশা করা যাচ্ছে যে, বায়োচার প্রযুক্তিটি দেশের কৃষিতে এক অনন্য মাত্রা যোগ করবে।
সিসিডিবির ডেভেলপমেন্ট পলিসি অ্যাডভাইজার এবং বায়োচার প্রজেক্ট-এর টিম লিডার এম মাহাবুবুল ইসলাম (কানাডিয়ান বিজ্ঞানী জুলিয়ান-এর সমন্বয়ে) উদ্ভাবন করেছেন ‘আখা’ (কৃষিবান্ধব চুলা)। এতে রান্নার পাশাপাশি উৎপাদিত হয় বায়োচার।
আখা (গ্যাসোফায়ার) এমন একটি রান্নার চুলা, যাতে কাঠ, খড়-কুটা, ডাল-পাতা, ধানের তুষ, কাঠের গুঁড়া, কচুরিপানা, গোবর ইত্যাদি ব্যবহার করে পাইরোলাইসিস পদ্ধতিতে বায়োচার তৈরি করা হয়। ‘আখা’ বা বিশেষ ধরনের এক চুলায় পোড়ানো কাঠ-কয়লা নিয়ে গুঁড়া করে ক্ষেতে ছিটিয়ে দিতে হয়।
আখা চুলায় বায়োমাস ব্যবহার করে বায়োচার উৎপাদন করা হয়। তাই আখা ব্যবহারকারীরা কম কাঠ ব্যবহার করে কার্বন নিঃসরণে ভূমিকা রাখছে। কৃষি বিশ^বিদ্যালয় ও হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় বায়োচার নিয়ে গবেষণা করছে।
মাঠ-পর্যায়ে বায়োচার ব্যবহার অত্যন্ত সার্থক ও সফলভাবে পরীক্ষিত হয়েছে। মাঠ-কর্মীদের মাধ্যমে আরো উন্নত পর্যায়ে এর বিস্তৃতি ঘটলে কৃষি উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।
বায়োচার ব্যবহার করলে কৃষকরা অর্থনৈতিক দিক থেকে সাশ্রয় লাভ করবেন। এছাড়া পরিবেশসম্মত এই জৈব সার ব্যবহারের জমির গুণগতমান ও পানির ধারণ ক্ষমতা অনেক গুণে বৃদ্ধি পাবে।
আমাদের এই মাটির প্রাণ হচ্ছে জৈব পদার্থ। আর এই জৈব পদার্থের পরিমাণ আমাদের দেশের মাটি থেকে দিন-দিন ভয়ানকভাবে কমে যাচ্ছে! তাই মাটির দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যরক্ষায় বায়োচার একটি অদ্বিতীয় অনুসঙ্গ।
এম ইসলাম