কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ দেশে প্রতিদিন বাড়ছে ভোজ্যতেলের চাহিদা। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় বাড়ছে আমদানি ব্যয়। আমদানি নির্ভরতা কমাতে এবং মানসম্মত ভোজ্যতেলের ফলন বৃদ্ধিতে দেশে নতুন তেলফসল ‘গোল্ডেন পেরিলা’ নিয়ে এসেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) একদল গবেষক। দীর্ঘদিন গবেষণা করে পেরিলাকে দেশীয় আবহাওয়ায় অভিযোজন করাতে সক্ষম হয়েছেন এ গবেষক দল। পেরিলা ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডসমৃদ্ধ একটি ভোজ্যতেলের জাত। সাউ পেরিলা-১ (গোল্ডেন পেরিলা) ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি ফসলটি সাউ পেরিলা-১ (গোল্ডেন পেরিলা বিডি) জাত হিসেবে নামকরণপূর্বক কৃষি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক অবমুক্ত।
ইতিমধ্যে দেশের ১২টি জেলায় এ ফসলটি পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করা হয়েছে এবং এর বাম্পার ফলনও হয়েছে। এ ফসলটির বিশেষত্ব হলো এর বীজ থেকে প্রাপ্ত তেল এ ৫০-৫৫% লিনোলিনিক এসিড (ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের প্রধান উৎস) যা মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী। এর বীজ থেকে ৪০% তেল আহরণ করা যায়, যার প্রায় ৯১% অসম্পৃক্ত ফ্যাটিএসিড। দেশীয় প্রদ্ধতির প্রচলিত ঘানিতে এ বীজের তেল আহরণ করা যায়।
পেরিলা-১ (গোল্ডেন পেরিলা বিডি) জাতটি লেমিয়াসি (মিন্ট ক্রপ) পরিবারভুক্ত। এ জাতের গাছের উচ্চতা ৯০-১০০ সেমি. পর্যন্ত হয়। বীজ সাদা, ধূসর, গাঢ় বাদামি হতে পারে এবং হাজার বীজের ওজন ৩.৫-৪.০০ গ্রাম। জাতটি খরাসহনশীল। খরিফ-২ তে চাষ করা যায়, যা শীতকালীন চাষনির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে।
পেরিলার ঔষুধি গুনঃ এর তেল আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী বিশেষত হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক ও ত্বকসহ ডায়াবেটিস রোগে এটি কার্যকর ভুমিকা রাখে। এতে শতকরা ৫০-৫৫ ভাগ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে যা হার্টের জন্য খুব উপকারী। মোট ফ্যাটের শতকরা ৯১ ভাগ অসম্পৃক্ত। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। এটি চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
তেলের ব্যবহার : বীজ থেকে প্রাপ্ত তেল পরিশোধন করে এবং পরিশোধন ছাড়া দুইভাবেই খাওয়া যায়। এ তেল নানা কাজে ব্যবহার করা হয়। যেমন- বিভিন্ন ধরনের রান্নার কাজে। সালাদের সাথে মিশিয়ে। বিভিন্ন ধরনের ভর্তা তৈরিতে। আচার এবং চাটনি তৈরিতে। বিভিন্ন খাবারের সুগন্ধি বৃদ্ধিতে।
সাউ পেরিলা-১ উৎপাদন প্রযুক্তিঃ পানি জমে না এমন প্রায় সব ধরনের মাটি ফসল চাষের জন্য উপযোগী। তবে বেলে দো-আঁশ ও দো-আঁশ মাটি পেরিলা চাষের জন্য বেশি উপযোগী। খরিফ-২ মৌসুমে চাষ করা হয়। প্রতি হেক্টরে ১.০-১.৫ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ১৫ জুলাই থেকে ২৫ জুলাই। মোট উৎপাদনকাল ১০০-১০৫ দিন (বীজতলায় ৩০ দিন এবং রোপণ পরবর্তী ৭০-৭৫ দিন)।
এম ইসলাম