মোঃ মাঈনুল ইসলাম মমিন: আজ ঈদুল আজহা, কোরবানি, বা ত্যাগের দিন। আর এ দিনকে ঘিরে অনেক কথাই লিখে গেছেন বহু মানব, মহামানবরা। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও কোরবানি বিষয়ে লিখে গেছেন। আর আমার এ লেখাটি নজরুল ইসলাম এর দুটি কবিতা যথা কোরবানি’ ও ‘শহীদী ঈদ’ কবিতা দুটির মাঝ থেকে নেয়া মাত্র কয়েকটি লাইনের উদ্ধৃতি দিয়ে।
লোভ-লালসায় জর্জরিত বিশ্ব মুসলিম সমাজকে উদ্দেশ্য করে কবি লিখেছেন, বনের পশু নয়- মনের পশুকে কোরবানি করাই সত্যিকারের কোরবানি।
ব্যস্! চুপ খামোশ রোদন! আজ শোর ওঠে জোর “খুন দে, জান দে, শির দে বত্স” শোন্! ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্য-গ্রহ’ শক্তির উদ্ধোধন
পবিত্র কোরআনে যে কোরবানির কথা বলা হয়েছে কবি মুলত সে কোরবানির কথাই বলে গেছেন তার কবিতার ছন্দে ছন্দে। যা ‘কোরবানি’ ও ‘শহীদী ঈদ’ কবিতা দিয়েই কবি আমাদের মুসলিম সমাজকে খুব ভাল ভাবেই বুঝিয়ে গেছেন।
কবি বলেছেন কোরবানির দিনে শুধু পশু জবেহ দিয়েই আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া সম্ভব নয়। আর এটি কবির মনগড়া কথাও নয়। পবিত্র কোরআনের আলোকেই কবি লিখে গেছেন।
সূরা হজের ৩৭নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন “এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা কর এ কারণে যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।”
কোরবানির মুল শিক্ষা হল আমাদের মনের পশুকে জবেহ করা।
ঈদুল আজহা মানেই আত্মত্যাগ। আজহা মানে প্রভাতের আলো, যা আমাবস্যার গভীর আধার কে পেছনে ফেলে নিয়ে আসে নতুন সকাল । কিন্তু আমরা আজ স্বার্থপরতায় ডুবে গেছি কীভাবে আমরা অন্যকে আলোর দিকে নিয়ে আসব!
মুসলমানের দায়িত্ব হল বিদ্বেষমুক্ত প্রেমের পৃথিবী গড়ে তোলা। যতদিন পর্যন্ত মুসলমান জাতি স্বার্থপরতা ত্যাগ করতে না পারবে ততদিন পর্যন্ত ন্যায়-ইনসাফ-সাম্যের পৃথিবী গড়ে উঠবে না।
নজরুল বলেছেন, স্বার্থপরের বেহেশত নাই । ‘শুধু আপনারে বাঁচায় যে, মুসলিম নহে ভণ্ড সে, ইসলাম বলে বাঁচ সবাই, দাও কোরবানি জান ও মাল বেহেশত তোমার কর হালাল, স্বার্থপরের বেহেশত নেই। যারা স্বার্থপর তাদের কোরবানি-নামাজ-রোজা সবকিছু লোকদেখানো ভণ্ডামি ছাড়া কিছুই নয়। নজরুল এদের সেরা ,”বে-দ্বীন শ্রেষ্ঠ কাফের বলেছেন। নজরুল বলেছেন, তোমরা ইসলামকে কবর দিয়ে আবার নিজেদের মুসলিম বলে গর্ব করছ! আরে, তোমাদের মতো পোশাকি ধার্মিক, লোক দেখানোরাই আজ ইসলাম নামের শান্তি ও মুক্তির পথকে কন্টকাকীর্ণ ফেলেছে।
কবি তার কবিতায় আরও বলেছেন, ‘নামাজ-রোজার শুধু ভড়ং, ইয়া উয়া পরে সেজেছ সং, ত্যাগ নাই তোর এক ছিদাম! কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কর জড়, ত্যাগের বেলাতে জড়সড়! তোর নামাজের কি আছে দাম?’ এসব স্বার্থপর মুসলমানদের নজরুল তার লেখায় বলেছেন, পশুর গলায় ছুরি চালানোর আগে নিজের মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা পশুর গলায় ছুরি চালিয়ে নিজেকে মানুষ বানিয়ে নাও।
সম্পাদনায়, এম ইসলাম ফাতিহা