কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক: রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ৩নং দুর্গম ফারুয়া ইউনিয়নের ধূপপানি ঝর্ণা পাহাড়ের স্থানীয় বাসিন্দাসহ পর্যটকদের কাছে একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি দৃষ্টিনন্দন ঝর্ণা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। রাঙ্গামাটির সুভলং, ঘাগড়াসগ পাহাড়ের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক ঝর্ণা থাকলে ও বর্তমানে রাঙ্গামাটিতে আগত পর্যটকসহ স্থানীয়দের কাছে ধূপপানি ঝর্ণাই এখন সকলের কাছে প্রিয় একটি স্পট।
দেশের সবচেয়ে সুন্দর ঝর্ণা গুলোর মধ্যে পাহাড়ের ধূপপানি ঝর্ণা একটি। সু বিশাল উচ্চতা,শুভ্র জলরাশি, ঝর্ণার নীচে গুহা, পথিমধ্যে উঁচু নিচুঁ দৃষ্টি নন্দন পাহাড় আর ছড়া, ছড়া হতে বহমান ঝিরিঝিরি পানির শব্দ, পাহাড়ী ছোট্ট ছোট্ট পাড়া এবং ক্ষুদ্র নৃ- তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জীবনধারা, ঝর্ণার অনেক উঁচু থেকে আঁচড়ে পড়া জলরাশি দর্শনার্থীদের মূহুর্তের জন্য বিমোহিত করে দেয়।ধূপ পানি ঝর্ণার নিচের গুহায় চোখ বন্ধ করে বসলে মনে হবে এ যেন অন্য একটি জগত।
সমতল থেকে এ ঝর্ণার উচ্চতা প্রায় ১৫০ ফুট। ঝর্ণা হতে আঁছড়ে পড়া পানির শব্দ প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে ও শুনা যায়।
ধূপপানি শব্দের অর্থ হচ্ছে কুয়াশার পানি। আবার তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় ধূপ শব্দের অর্থ হলো সাদা পানি। পাহাড়ের গা ঘেঁষে কুয়াশার মতো অবিরাম ধারায় সাদা পানি প্রবাহিত হয় বলে স্থানীয়রা এর নাম রাখে ধূপপানি ঝর্ণা।
সংগীতের সুর এবং তালের অপূর্ব সুরধ্বনির মতো এ ঝর্ণা হতে যেই সুর লহড়ি বেজে উঠে, মনে হয় কোন এক স্বর্গের পরী তাঁর অপূর্ব কন্ঠে গান শুনিয়ে যাচ্ছেন সকলকে।
ধূপপানি ঝর্ণা নিয়ে বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তঞ্চঙ্গ্যা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা(বাসস)কে বলেন, ধূপপান ঝর্ণাটি লোক চক্ষুর অন্তরালে ছিল।
২০০০ সালে এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী গভীর অরণ্যে ধূপ পানি ঝর্ণার উপরে বসে পাহাড়ে ধ্যান শুরু করেন।পরে স্থানীয় লোক জন মিলে ঐ বৌদ্ধ ধ্যানরত সন্ন্যাসীকে সেবা করতে গেলে ঐ ঝর্ণাটির সৌন্দয্য জনসম্মুখে পরিচিতি লাভ করে। তিনি এ ঝর্ণার অবকাঠামো নির্মাণে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা(বাসস)কে বলেন, রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলা দেশের সবচেয়ে সুন্দর উপজেলা। এ উপজেলায় যতগুলো ঝর্ণা রয়েছে, দেশের অন্য কোন উপজেলায় এতগুলো ঝর্ণা নেই। এ উপজেলায় ঝর্ণা, পাহাড়, লেক ও সবুজের সমন্বয়ে নৈসর্গিক স্বর্গ বহমান আছে। এখানকার পর্যটন উপযোগী স্পটগুলোর উন্নয়নের মাধ্যমে এখানে বসবাসরত স্থানীয়দের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থার পাশাপাশি এটি হতে পারে বাংলাদেশের পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি স্থান এবং এখানে আসলে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ তাদের স্বর্গরাজ্যেরই সন্ধান পাবে।
বিলাইছড়ির ধূপপানি ঝর্ণা নিয়ে স্থানীয় ৩ নং ফারুয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বিদ্যালাল তঞ্চঙ্গ্যা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা(বাসস)কে জানান, বর্তমানে প্রায়ই প্রতি নিয়তই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক কষ্ট পর্যটকরা এ ধূপপানি ঝর্ণা দেখতে ছুটে আসেন। তিনি বলেন, দুূর্গম পাহাড়ে সরকারের বর্তমান চলমান উন্নয়নের পাশাপাশি সরকার যদি এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থার আরো উন্নয়ন ঘটায় তাহলে এখানে আরোও বেশী পর্যটকরের আগমন ঘটবে।
ধূপপানি ঝর্ণাকে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার জন্য তিনি সরকারের কাছে আহবান জানান। তবে বিলাইছড়ি উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বিলাইছড়ি উপজেলা হতে ধুপশিল হয়ে ধুপপানি পাড়া পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণের চেষ্টা চলছে। এ সড়ক নির্মাণ হলে বিলাইছড়ি হতে সরাসরি চাঁদের গাড়ি দিয়ে ধূপপানি ঝর্ণার কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব হবে।
ধূপপানি ঝর্ণায় যেতে হলে প্রথমে রাঙ্গামাটি বা কাপ্তাই উপজেলা হতে নৌ পথে বিলাইছড়ি উপজেলা হয়ে ফারুয়া ইউনিয়ন এর উলুছড়ি পাড়ায় গিয়ে ২/৩ঘন্টা পায়ে হেঁটে ধূপপানি পাড়া পেরুলেই এ ঝর্ণার দেখা মিলবে।
দুর্গম পাহাড়ে লুকিয়ে থাকা ধূপপানি ঝর্ণা শুধু বাংলাদেশ নয় বিশে^র অনেক দেশের আকর্ষণীয় স্থানগুলোকে ও হার মানাবে এমনটাই বলছে স্থানীয়রা।
সুত্র: বাসস/কৃষি প্রতিক্ষণ/এম ইসলাম