
কাটিমন জাতের কলমের গাছে মুকুল এসেছে দেখাচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাইফুর রহমান
কৃষি প্রতিক্ষণ রিপোর্ট: বিশ্বে আম উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ ১০-এ। দেশে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় এ ফলের। আর প্রতি বছরই আমের উৎপাদন বাড়ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, দেশে আমের উৎপাদন ২৪ লাখ টনের মতো। অন্যদিকে আম উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণন, মোড়কীকরণ সহ দেশে আমের বাজার প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার।
এদিকে আম রপ্তানির ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে নতুন সাম্ভাবনা। আম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরনে দেশে স্থাপিত হচ্ছে ভিএইচটি প্ল্যান্ট। বাংলাদেশ থেকে আম আমদানিতে আগ্রহ রয়েছে ইউরোপ, আমেরিকা,জাপানসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের। সব মিলেয়ে এখন দেশে ও দেশের বাহিরে চাহিদা বেড়েছে স্বাদে গন্ধে আকর্ষণীয় ও গুণগতমানের আমের। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষি বিভাগ কাজ করছে আমের অনুন্নত জাতকে উন্নত জাতে পরিবর্তন করা নিয়ে। আর ইতিমধ্যে এর সফলতাও এসেছে যাকে বলা হচ্ছে আমের ‘টপ ওয়ার্কিং প্রযুক্তি’
বিগত দিনে দেশে বেশিরভাগ আম গাছ বীজ থেকে হয়েছে। ফলে বীজের গাছ থেকে ভাল জাতের আম পাওয়া সম্ভব হয় না এবং ফলন পেতেও সময় বেশি লাগে। তাছাড়া অনেক সময় অসাধু ব্যবসায়ীরা খারাপ জাতের গাছ দিয়ে প্রতারিত করে থাকে। যার জন্য প্রতি বছর বিভিন্ন বয়সের আম গাছ চাষিরা কেটে ফেলেন। কিন্তু এখন অতি সহজেই’ টপ ওয়ার্কিং’ এর মাধ্যমে অনুন্নত আমের জাতকে উন্নত জাতে পরিবর্তন করা যায়। এছাড়া টপ ওয়াার্কিং পদ্ধতির মাধ্যমে একই গাছে কয়েক প্রকার আম উৎপাদনও সম্ভব বলে জানালেন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাইফুর রহমান, যিনি এ প্রযুক্তি নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। তিনি জানালেন আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাধীন বগুড়ার জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার রহবল ব্লকের উত্তর কৃষ্ণপুর গ্রামের ৫০ জন কৃষক পরিবারের বসতবাড়িতে একটি করে মাঝারি অথবা ছোট আম গাছে ১০ টি করে উন্নত জাতের সায়ন জোড় কলমের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করা হয়। বারি আম-৪, ব্যানানা, কিউজাই, কাটিমন, হাড়িভাঙ্গা ইত্যাদি জাতের। এখন প্রত্যেকের গাছেই ২০থেকে ৮০% পর্যন্ত কলম সফল হয়েছে। তিনি আরও জানালেন যাদের কাটিমন জাতের কলম সফল হয়েছে তাদের মাঝে কয়েক জনের গাছে মুকুলও এসেছে।
কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাইফুর রহমান, জানালেন কি পদ্ধতিতে এ জাত পরিবর্তন করতে হয়।
টপ ওয়ার্কিং পদ্ধতি: প্রথমে অনুন্নত জাতের আম গাছকে সমূলে না কেটে হালকা (২০ থেকে ২৫ সেমি.পরিধির) ডালগুলো কেটে দিয়ে পরে সেখান থেকে যখন আঙ্গুলের মতো মোটা ডাল বের হয়,তখন তাতে কোন উন্নত জাতের সায়ন বা ডাল সংযোগ করে নতুন জাতে রুপান্তর করা হয়। এছাড়া একই গাছে একই সাথে কয়েক প্রকার আম উৎপাদনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন জাতের সায়ন সংযোগ করতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে স্টক এবং সায়নের বয়স ও পরিধি যেন একই হয় এতে সফলতার হার বেশি হয়।
কলম করার পর মূল গাছের শাখা-প্রশাখা বের হলে তা ভেঙে ফেলতে হবে। নতুন জাতে পরিবর্তিত গাছে তৃতীয় বছর হতে আম উৎপাদন শুরু হয় এবং চতুর্থ বছর হতে ভাল ফলন দিতে শুরু করে। গাছের বয়স ১০ থেকে ১৫ বছর হলে এ পদ্ধতিটি প্রয়োগ করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে।
কৃষি প্রতিক্ষণ/এম ইসলাম