
ছবি অনলাইন থেকে সংগৃহীত
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক: বিলুপ্তিপ্রায় প্রজাতির ‘কাকিলা’ এ মাছকে অনেকেই চেনে কাইক্কা নামে। আশার খবর হলো, কাকিলা মাছ আবার ফিরছে আমাদের জলাশয়ে।
কৃত্রিম প্রজননের সফলতার ধারাবাহিকতায় এবার কাকিলা মাছের কলাকৌশল উদ্ভাবনে সফল হয়েছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) যশোরের মৎস্য বিজ্ঞানীরা।
কাকিলা মাছের কৃত্রিম প্রজনন এটিই বাংলাদেশে প্রথম। বিশ্বের কোথাও এই মাছের কৃত্রিম প্রজননের তথ্য নেই ।
সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা জানান, মানবদেহের জন্য উপকারী অনুপুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ এবং কাঁটা কম থাকায় মাছটি সবার খুব প্রিয়। একসময় অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে হরহামেশা দেখা মিলত কাকিলার। কিন্তু জলবায়ুর প্রভাব, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণে বাসস্থান ও প্রজননক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ মাছের প্রাচুর্যতা কমে গেছে। বিএফআরআইয়ে তিন বছরের নিবিড় গবেষণার পর এই সফলতা পান বিজ্ঞানীরা। এর ফলে কাকিলা মাছ আর হারাবে না।
বিএফআরআই যশোর স্বাদুপানি উপকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. রবিউল আউয়াল হোসেন, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শিশির কুমার দে এ গবেষণা পরিচালনা করেন। বিজ্ঞানীরা জানান, কাকিলা একটি বিলুপ্তপ্রায় মাছ।
এর দেহ সরু, ঠোঁট লম্বাটে এবং ধারালো দাঁতযুক্ত। বাংলাদেশে যে জাতটি পাওয়া যায় সেটি মিঠাপানির। মাছটি বাংলাদেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে কাইকল্যা ও কাইক্কা নামে পরিচিত। রং ও আকারে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও এই মাছ শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডেও দেখা যায়।
গবেষকদলের প্রধান ড. মো. রবিউল আউয়াল হোসেন জানান, কাকিলার দেহ লম্বায় ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার হয়। পরিণত পুরুষ মাছের মাথার লাল চূড়া দেখতে পাওয়া যায়, যা থেকে সহজেই স্ত্রী ও পুরুষ মাছ আলাদা করা যায়। এ ছাড়া পুরুষ মাছের দেহ স্ত্রী মাছের চেয়ে বেশি সরু এবং আকারে ছোট হয়। এটি শিকারি মাছ। মূলত ছোট মাছ খেয়ে থাকে। প্রাকৃতিকভাবে প্রবহমান জলাশয়ে, বিশেষ করে নদীতে এবং বর্ষাকালে প্লাবিত অঞ্চলে প্রজনন করে থাকে। পরিণত মাছ ভাসমান জলজ উদ্ভিদ নেই এমন স্থানে বাস করলেও জলজ উদ্ভিদের পাতার নিচে ও ভাসমান শিকড়ে স্ত্রী মাছ ডিম পাড়ে। গবেষকদলের সদস্য ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, পদ্মা নদী থেকে কাকিলার ব্রুড (মা-বাবা) মাছ সংগ্রহ করে বিশেষ পদ্ধতিতে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করে যশোরের স্বাদুপানি উপকেন্দ্রের পুকুরে ছাড়া হয়। পরে হ্যাচারিতে উৎপাদিত কার্পজাতীয় মাছের জীবিত পোনা এবং নানা জলাশয় থেকে সংগ্রহ করা জীবিত ছোট মাছ খাইয়ে পুকুরের আবদ্ধ পরিবেশে মাছকে অভ্যস্ত করা হয়। পরে এ বছরের মে মাস থেকে বৈজ্ঞানিক নিয়ম অনুসরণ করে কৃত্রিম প্রজননের উদ্দেশ্যে উপকেন্দ্রের হ্যাচারিতে নির্দিষ্টসংখ্যক ব্রুড মাছকে বিভিন্ন ডোজে হরমোন ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়। এভাবে কয়েকবার বিভিন্ন ডোজের ট্রায়াল দেওয়া হলেও মাছের প্রজননে সফলতা আসেনি। অবশেষে গত বুধবার প্রজনন করা মাছের ডিম থেকে পোনা বের হয়। এর মাধ্যমে কাকিলা মাছের কৃত্রিম প্রজননে সফলতা আসে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, দেশের বিলুপ্তপ্রায় ৬৪টি মাছের মধ্যে ৩০টির কৃত্রিম প্রজননে এরই মধ্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সফলতা দেখিয়েছে। সফলতার ধারাবাহিকতায় ৩১তম মাছ হিসেবে কাকিলা মাছ যুক্ত হলো। তিনি আরো বলেন, পর্যায়ক্রমে সব বিপন্ন প্রজাতির মাছকে কৃত্রিম প্রজননের আওতায় আনা হবে, যাতে দেশের প্রত্যেক মানুষের খাবারের পাতে দেশীয় মাছ থাকে।
সুত্রঃ বাসস/ কৃষি প্রতিক্ষণ/ এম ইসলাম